ব্রেনের বা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে ১০টি জাদুকরী খাবার

আজকের এই আর্টিকেলটি ব্রেনের বা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে ১০টি জাদুকরী খাবার - স্ট্রেস কমানোর কিছু সহজ উপায় সম্পর্কে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে, সেই সব বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে।
ব্রেনের বা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে ১০টি জাদুকরী খাবার
আমাদের ব্রেন বা মস্তিষ্ক আমাদের শরীরের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। মস্তিষ্ক আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, স্মৃতি এবং আরও অনেক কিছুর জন্য দায়ী থাকে। এজন্য সুস্থ থাকার জন্য, আমাদের মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার বিশেষভাবে ব্রেনের বা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়ে থাকে।

তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক ব্রেনের বা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে ১০টি জাদুকরী খাবার এবং স্ট্রেস কমানোর কিছু সহজ উপায় সম্পর্কে।

ব্রেনের বা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে ১০টি জাদুকরী খাবার

আমরা যা খাই তা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। কেননা মস্তিষ্ক আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, স্মৃতি এবং আরও অনেক কিছুর জন্য দায়ী থাকে। বয়সের সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমতে থাকে। এজন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ যত্নের। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে ১০টি জাদুকরী খাবার গুলো সম্পর্কে।

১. চর্বিযুক্ত মাছঃ স্যামন, ম্যাকেরেল, সার্ডিন এবং হেরিং এর মতো চর্বিযুক্ত মাছগুলিতে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা মস্তিষ্কের কোষের গঠন এবং কার্যকারিতা জন্য গুরুত্বপূর্ণভুমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড স্মৃতিশক্তি, মেজাজ এবং মস্তিষ্কের ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

২. বাদামঃ বাদাম, আখরোট এবং চিনাবাদামের মতো বাদাম ভিটামিন E, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস হয়ে থাকে।বাদামের পুষ্টিগুলি মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

৩. ব্লুবেরিঃ ব্লুবেরিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে এবং স্মৃতিশক্তি এবং শেখা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত ব্লুবেরি খাওয়া বয়সের সাথে সাথে মানসিক কার্যকারিতা হ্রাসের ঝুঁকি কমাতে পারে।

৪. ডার্ক চকোলেটঃ ডার্ক চকোলেটে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে,যা এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।গবেষণায় দেখা গেছে যে ডার্ক চকোলেট খাওয়া মস্তিষ্কের প্রবাহ উন্নত করতে এবং স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

৫. ডিমঃ ডিম কোলিনের একটি ভালো উৎস, যা একটি পুষ্টি যা মস্তিষ্কের কোষের ঝিল্লিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।কোলিন স্মৃতিশক্তি এবং শেখা উন্নত করতে এবং বয়সের সাথে সাথে মানসিক কার্যকারিতা হ্রাসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৬. সবুজ শাকসবজিঃ পালং শাক, কেল এবং ব্রকলির মতো সবুজ শাকসবজি ভিটামিন কে, লুটেইন এবং জেক্সানথিন সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে।

৭. দইঃ দই প্রোবায়োটিকের একটি ভাল উৎস, যা সুস্থ হজমে সাহায্য করে। হজম স্বাস্থ্য মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত,যা মস্তিষ্ক-গাটের সংযোগ উন্নত করতে এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। 

৮. পানিঃ আমাদের শরীরের 60% এরও বেশি জল দিয়ে তৈরি, এবং মস্তিষ্ক কোন ব্যতিক্রম নয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। 

৯. বীজঃ বীজ ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্কের মতো পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ যা মস্তিষ্কের সুরক্ষায় সাহায্য করে এবং বয়সের সাথে সাথে মানসিক অবক্ষয় রোধ করতে পারে। বীজের মধ্যে কুমড়ো বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, তিল বীজ, চিয়া বীজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

১০. হলুদঃ হলুদে কারকিউমিন থাকে, একটি যৌগ যা মস্তিষ্কের প্রদাহ কমাতে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে।

মনে রাখবেন এই খাবারগুলি ছাড়াও, স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অংশ হিসাবে প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য খাওয়াও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর খাবার সমূহ 

মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর খাবার সমূহ যা আপনার স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তার শত্রু - সুস্থ থাকার জন্য, আমাদের মস্তিষ্ককে যত্ন নেওয়া এবং এটিকে সঠিকভাবে পুষ্টি সরবরাহ করা অত্যন্ত জরুরি।

কিন্তু কিছু খাবার আছে যা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। এই খাবারগুলো নিয়মিত খেলে আমাদের স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, এবং মনোযোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে, এগুলো মস্তিষ্কের অবক্ষয় এবং বিভিন্ন নিউরোলজিক্যাল রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক আমাদের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর খাবার সমূহ সম্পর্কে।
  • প্রক্রিয়াজাত খাবারঃ ফাস্ট ফুড, প্যাকেজড স্ন্যাকস, এবং মিষ্টি পানীয় প্রচুর চিনি, অস্বাস্থ্যকর চর্বি, এবং সোডিয়ামে ভরা থাকে। এই খাবারগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে থাকে এবং মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে।দীর্ঘমেয়াদে, এগুলো স্মৃতিশক্তি, শেখা এবং মনোযোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে থাকে।
  • চিনিযুক্ত পানীয়ঃ সফট ড্রিংক, এনার্জি ড্রিংক, এবং প্যাকেজ কৃত ফলের রসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে,যা জ্ঞানীয় কার্যকারিতা এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস করে থাকে।
  • সাদা আটাঃ সাদা আটা একটি পরিশোধিত শস্য যাতে ফাইবার এবং পুষ্টিগুলি কম থাকে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। সাদা আটার তৈরি খাবারের মধ্যে রয়েছে সাদা পাউরুটি, পাস্তা, সিরিয়াল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
  • ভাজা খাবারঃ ভাজা খাবার প্রচুর চর্বিযুক্ত যা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে থাকে এবং মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে জ্ঞানীয় কার্যকারিতা এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে।
  • লাল মাংসঃ অতিরিক্ত লাল মাংস খাওয়া মস্তিষ্কের জন্য ভালো নয়। এতে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং মস্তিষ্কে রক্ত ​​প্রবাহ কমিয়ে দেয়।
  • মিষ্টিঃ মিষ্টিতে প্রচুর চিনি থাকে যা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। মিষ্টির মধ্যে রয়েছে কেক, কুকি, এবং ক্যান্ডি।নিয়মিত খেলে মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং স্মৃতিশক্তি ও জ্ঞানীয় কার্যকারিতা নষ্ট করে।
স্ট্রেস কমানোর কিছু সহজ উপায়

স্ট্রেস কমানোর কিছু সহজ উপায়

শারীরিক ব্যায়ামঃ নিয়মিত ব্যায়াম করা স্ট্রেস কমাতে একটি দারুন উপায়। হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, বা যেকোনো ধরণের ব্যায়াম যা আপনার হৃদস্পন্দন বাড়ায় তা স্ট্রেস হরমোন কমাতে এবং এন্ডোরফিন নিঃসরণে সাহায্য করতে পারে, যার মেজাজ উন্নত করার প্রভাব রয়েছে।প্রতিদিন 30 মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন, বা সপ্তাহে 3-4 দিন 10 মিনিট করে ব্যায়াম করুন। আপনি যদি ব্যায়াম শুরু করতে নতুন হন তবে ধীরে ধীরে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে সময় এবং তীব্রতা বাড়ান।

মননশীলতা এবং ধ্যানঃ মননশীলতা এবং ধ্যান আপনাকে বর্তমান মুহুর্তে মনোযোগ দিতে এবং আপনার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতিগুলিকে বিচার না করে পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করতে পারে।এটি চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।অনলাইনে অনেকগুলি বিনামূল্যের মননশীলতা এবং ধ্যান সংস্থান পাওয়া যায়, অথবা আপনি একটি গাইডেড ধ্যান ক্লাসে যোগ দিতে পারেন।

প্রকৃতিতে সময় কাটানঃ প্রকৃতিতে সময় কাটানো আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে।এটি চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করতে পারে, এবং আপনার মেজাজ এবং সামগ্রিক সুস্থতা উন্নত করতে পারে।একটি পার্কে হাঁটতে যান, বাইরে বসে বই পড়ুন, বা প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে হাঁটুন।

পর্যাপ্ত ঘুমঃ যখন আপনি ঘুমাতে বঞ্চিত হন তখন আপনার শরীর স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল আরও বেশি নিঃসরণ করে।পর্যাপ্ত ঘুম আপনার শরীরকে স্ট্রেস থেকে সুস্থ হতে এবং আপনার মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। প্রতি রাতে 7-8 ঘন্টা ঘুমের চেষ্টা করুন।

স্বাস্থ্যকর খাবার খানঃ আপনি যা খান তা আপনার মেজাজ এবং শক্তির স্তরকে প্রভাবিত করতে পারে।প্রচুর ফল, শাকসবজি, এবং সম্পূর্ণ শস্য খাওয়া আপনাকে সুস্থ থাকতে এবং চাপ মোকাবেলা করতে সহায়তা করতে পারে।প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।

সামাজিক সমর্থনঃ সামাজিক সমর্থন স্ট্রেস মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বন্ধু, পরিবার এবং প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটান।যদি আপনি অভিভূত বোধ করেন তবে একজন থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলরের সাথে কথা বলতে পারেন।

আপনার চাপের উৎসগুলি চিহ্নিত করুনঃ আপনার স্ট্রেস কী ট্রিগার করে তা বের করার চেষ্টা করুন। একবার আপনি আপনার চাপের উৎসগুলি জানলে, আপনি সেগুলিকে এড়ানোর বা পরিচালনা করার উপায় খুঁজে বের করতে পারবেন। কিছু চাপের উৎস, যেমন কাজের চাপ, এড়ানো সম্ভব নয়। এই ক্ষেত্রে, আপনাকে সেগুলি মোকাবেলা করার স্বাস্থ্যকর উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

মনে রাখবেন, স্ট্রেস জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ। গুরুত্বপূর্ণ হল স্বাস্থ্যকর উপায়ে এটি মোকাবেলা করার কৌশলগুলি শেখা।আপনার জন্য কোনটি কাজ করে তা খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি চেষ্টা করুন,ধৈর্য ধরুন এবং নিয়মিত অনুশীলন করুন।ইতিবাচক চিন্তাভাবনা অনুশীলন করুন এবং নিজের যত্ন নিন।

লেখকের শেষ মন্তব্য

আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি ব্রেনের বা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে ১০টি জাদুকরী খাবার - স্ট্রেস কমানোর কিছু সহজ উপায় সেই সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।আজকের বিষয়গুলো আলোচনা থেকে বলা যায় যে আমরা যা খাই তা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে থাকে।

এজন্য আমাদের এই খাবারগুলি ছাড়াও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অংশ হিসাবে প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য খাওয়াও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এতক্ষণ আজকের এই আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url