বিটরুট খাওয়ার ১০টি জাদুকরী উপকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

 
বিটরুট খাওয়ার ১০টি জাদুকরী উপকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বিটরুট: পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এক অসাধারণ সবজি

বিটরুট, যা লাল রক্তের সবজি নামেও পরিচিত, একটি জনপ্রিয় সবজি যা তার সুন্দর গোলাপী-লাল রঙ এবং মৃদু মাটির স্বাদের জন্য পরিচিত। এটি শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং অত্যন্ত পুষ্টিকরও বটে। প্রাচীনকাল থেকে বিটরুট ঔষধি গুণাবলীর জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং আধুনিক বিজ্ঞান তার স্বাস্থ্য উপকারিতা সমর্থন করে থাকেন।

পুষ্টিগুণের সমাহারঃ 

  • ভিটামিন এবং খনিজ: বিটরুট ভিটামিন এ, সি, বি6, ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম এবং আয়রনের একটি চমৎকার উৎস।
    • ভিটামিন এ: দৃষ্টিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং কোষের বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
    • ভিটামিন সি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।
    • ভিটামিন বি6: তন্ত্রিকা সেরোটনিন তৈরি করে এবং জমাকৃত শক্তি মুক্ত করে হৃদরোগ, স্ট্রোক, অবসাদ এবং অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে।
    • ফোলেট: গর্ভবতী মহিলাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
    • ম্যাঙ্গানিজ: হাড়ের গঠন, শক্তি উৎপাদন এবং কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
    • পটাশিয়াম: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং পেশী ও স্নায়ু কার্যকারিতা বজায় রাখে।
    • আয়রন: অক্সিজেন পরিবহনের জন্য অপরিহার্য এবং ক্লান্তি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
    • বেটাসায়ানিন: একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
    • লুটেইন এবং জেক্সান্থিন: দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করতে এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • নাইট্রেট: বিটরুট নাইট্রেটে সমৃদ্ধ, যা শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। নাইট্রিক অক্সাইড রক্ত ​​নালী প্রসারিত করতে এবং রক্ত ​​চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • ফাইবার: এতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে যা হজম উন্নত করতে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে এবং মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 
  • স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ

    • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: বিটরুট রক্তচাপ কমাতে এবং রক্ত ​​নালীর কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। এতে নাইট্রেট থাকে, যা শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। নাইট্রিক অক্সাইড রক্ত ​​নালী প্রসারিত করে এবং রক্ত ​​প্রবাহকে আরও সহজ করে তোলে, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
    • ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে: বিটরুট অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, বিশেষ করে বেটাসায়ানিন নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে বিটরুটের সেবন কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
    • ব্যায়ামের পারফরম্যান্স উন্নত করে: বিটরুট পেশীতে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করতে পারে, যা ব্যায়ামের সময় ক্লান্তি হ্রাস করতে এবং পারফরম্যান্স উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এটি নাইট্রেটের কারণে, যা পেশী কোষে অক্সিজেন গ্রহণকে উন্নত করে।
    • মস্তিষ্কের স্মৃতি উন্নত করে: নিয়মিত বিটরুট খাওয়া মস্তিষ্কের রক্ত ​​প্রবাহ বৃদ্ধি করতে এবং মানসিক স্মৃতি উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে বিটরুটের সেবন মনোযোগ, স্মৃতি এবং প্রক্রিয়াকরণের গতি উন্নত করতে পারে।
    • রক্ত ​​শর্করার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: বিটরুট রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে এবং রক্তে শর্করার শোষণ ধীর করতে সাহায্য করতে পারে।
    • প্রদাহ কমায়: বিটরুট অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ, যা শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।  

    ব্যবহারঃ

    বিটরুট কাঁচা, রান্না করা বা আচার হিসাবে খাওয়া যেতে পারে। এটি সালাদ, স্যুপ, স্মুদি এবং এমনকি ডেজার্টে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিটরুটের পাতাও খাওয়ার জন্য উপযুক্ত এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।

  • সালাদ: কাঁচা বা রান্না করা বিটরুট সবজি সালাদে এক অসাধারণ স্বাদ ও রঙ যোগ করে।
  • স্যুপ: বিটরুট দিয়ে তৈরি স্যুপ ঠান্ডা বা গরম যেকোনো ঋতুতেই উপভোগ্য।
  • ভাজি: বিটরুট ভেজে, ভুনে, বা রোস্ট করে বিভিন্ন স্বাদের খাবার তৈরি করা যায়।
  • আচার: বিটরুটের আচার একটি জনপ্রিয় বাঙালি খাবার যা ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়।
  • জুস: বিটরুটের রস একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় যা শক্তি বৃদ্ধি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।
  • চিপস: পাতলা করে কেটে ভেজে বিটরুটের চিপস তৈরি করা যায়, যা একটি সুস্বাদু নাস্তা।
  • ডেজার্ট: বিটরুট কেক, ব্রাউনি, বা মাফিন তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • প্রাকৃতিক রঞ্জক: বিটরুটের রঙিন রস টেক্সটাইল, কাগজ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র রঞ্জিত করতে ব্যবহার হয়ে থাকে।  
  • বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

    • কিছু লোকের বিটরুট খাওয়ার পর প্রস্রাব লাল হতে পারে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এবং উদ্বেগের কোন কারণ নেই।
    • কিডনি রোগীদের বিট রুট খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

    বিট রুট একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় বিট রুট অন্তর্ভুক্ত করলে আপনি এর স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো পেতে পারেন।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url