কাঁচা আম খাওয়ার ১০টি জাদুকরী উপকারিতা

গ্রীষ্মের দাবানল যখন তীব্রতম, তখন বাজারে ছড়িয়ে পড়ে সবুজের সমারোহ কাঁচা আম।গরমে পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে কাঁচা আম। কাঁচা আমের নাম শুনলেই সবার মুখে পানি চলে আসে। টক,মিষ্টি, ঝাল, লবণ সব রসেই জমিয়ে দেয় এই ফল। কিন্তু জানেন কি, কাঁচা আম শুধু সুস্বাদুই নয়, এর ভেতরে লুকিয়ে আছে অজস্র গুণ। আসুন জেনে নেই কাঁচা আম খাওয়ার ১০টি জাদুকরী উপকারিতা।
কাঁচা আম খাওয়ার ১০টি জাদুকরী উপকারিতা
কাঁচা আমের শরবতের চেয়ে আরামদায়ক কিছু হতে পারে না। কিন্তু জানেন কি, কাঁচা আম শুধু তৃষ্ণা মেটাতেই পারদর্শী নয়, এর রয়েছে আরও অজস্র গুণাবলী যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

আজকের এই লেখায়, কাঁচা আম খাওয়ার ১০টি জাদুকরী উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব যা আপনাকে অবাক করবে।

কাঁচা আমঃ গ্রীষ্মের রসালো আশীর্বাদ

গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন তৃষ্ণা জ্বালা তীব্রতর, তখন কাঁচা আমের শরবতের মতো সতেজ ও ঠান্ডা পানীয় আর কিছুই হতে পারে না। কিন্তু কাঁচা আম শুধু তৃষ্ণা নিবারণের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নয়, এর রয়েছে অজস্র গুণাবলী যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

কাঁচা আমের পুষ্টিগুণ সমূহঃ

আমকে ফলের রাজাও বলা হয়। আম খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। এই ফল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টি গুণে ভরপুর।

  • ভিটামিনঃ কাঁচা আম ভিটামিন এ, সি, ই, এবং বি কমপ্লেক্সের একটি ভালো উৎস।
  • খনিজঃ এতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, এবং ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ কাঁচা আমে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনলের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে থাকে।
  • ফাইবারঃ কাঁচা আমে অদ্রবণীয় এবং দ্রবণীয় ফাইবার উভয়ই প্রচুর পরিমাণে থাকে।
অন্যান্য ফলের মতো মিষ্টি না হওয়ায় এতে চিনি নেই বললেই চলে। তাই যারা ডায়েট করছেন বা ডায়াবেটিস রোগী তারা অনায়াসে খেতে পারবেন কাঁচা আম।

কাঁচা আম খাওয়ার ১০টি জাদুকরী উপকারিতাঃ

১. হজমশক্তি উন্নত করেঃ কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এতে থাকা এনজাইমগুলি  আন্ত্রিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ কাঁচা আম ভিটামিন সি'র একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং ঠান্ডা, সর্দি এবং জ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

৩. ত্বকের যত্নঃ কাঁচা আমে ভিটামিন এ এবং ই প্রচুর পরিমাণে থাকে যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের কোষগুলিকে পুনর্জীবিত করতে, বয়সের ছাপ দূর করতে এবং ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ কাঁচা আম ক্যালোরিতে কম এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা আপনাকে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে এবং অতিরিক্ত খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি ওজন কমাতে এবং স্থূলতা প্রতিরোধ করতে একটি কার্যকর উপায় হতে পারে।

৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ কাঁচা আমে পটাশিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এমন লোকদের জন্য উপকারী হতে পারে।

৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ কাঁচা আমে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।

৭. চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালোঃ কাঁচা আম ভিটামিন এ'র একটি ভালো উৎস, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রাতের অন্ধত্ব প্রতিরোধ করতে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।

৮.  মুখের ঘা সারাতে সাহায্য করেঃ কাঁচা আমের অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য মুখের ঘা এবং ঠোঁট ফাটা সারাতে সাহায্য করে।

৯.  চুলের যত্নঃ কাঁচা আমে ভিটামিন ই প্রচুর পরিমাণে থাকে যা চুলের গঠন উন্নত করতে সাহায্য করে।

১০. শরীর ঠান্ডা রাখেঃ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে কাঁচা আম হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি কাঁচা আম আমাদের শরীরের সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে দারুণ কার্যকরী। কাঁচা আমে থাকা পটাশিয়াম শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে কাজ করে ঠথাকে। ফলে ঘাম কম হয় এবং ক্লান্তিও কমে আসে।

কাঁচা আম খাওয়ার নিয়মঃ

কাঁচা আম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে কাঁচা আম খেলে।শরীরের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • কতটুকু পরিমাণে খাবেনঃ প্রতিদিন কাঁচা আম খাওয়ার পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত খেলে পেট খারাপ, পাতলা পায়খানা, অ্যালার্জি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। প্রথমে অল্প পরিমাণে খেয়ে দেখুন এবং শরীরের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করুন। যদি কোন অস্বস্তি না হয়, তাহলে ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে পারেন। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে পরিমাণ আরও কমিয়ে দিতে হবে।
  • কোন সময় খাবেনঃ খাবারের আগে বা পরে কাঁচা আম খাওয়া ভালো। খাবারের সাথে খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। সকাল বেলা খালি পেটে কাঁচা আম খাওয়া এড়িয়ে চলুন। এতে পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • প্রস্তুত প্রণালীঃ কাঁচা আম ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন। তারপর লবণ, মরিচ, জিরা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো ইত্যাদি মসলা দিয়ে মেখে খেতে পারেন। আমের টুকরা করে চাটনি, আচার, শরবত ইত্যাদি তৈরি করেও খেতে পারেন।

কাঁচা আমের কিছু জনপ্রিয় খাবারঃ

  • কাঁচা আমের আচার
  • কাঁচা আমের শরবত
  • কাঁচা আমের টক
  • কাঁচা আমের ডাল
  • কাঁচা আমের চাটনি
  • কাঁচা আমের ইলিশ ভাতুরি 
এছাড়াও কাঁচা আম দিয়ে অনেক  সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়।

কাঁচা আম খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতাঃ

  • যাদের ডায়াবেটিস, পেটের ঘা, অ্যালার্জি ইত্যাদি সমস্যা আছে তাদের কাঁচা আম খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
  • যাদের অ্যাসিড রিফ্লাক্স, পেটের ঘা, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা আছে তারা কাঁচা আম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • ছোট বাচ্চাদের কাঁচা আম খাওয়ানোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
  • কাঁচা আমে অনেক অ্যাসিড থাকে যা দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই খাওয়ার পরে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন।
  • কাঁচা আমের খোসা ও বীজ খাওয়া উচিত নয়।
কাঁচা আম শুধুমাত্র মৌসুমে খাওয়াই ভালো। পরিমাণমতো খেলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতাঃ

কাঁচা আম টক ও মিষ্টি স্বাদের হওয়ার কারণে গর্ভাবস্থায় মহিলাদের কাছে খুবই প্রিয় একটি ফল।কারণ কাঁচা আম খেলে বমি বমি ভাবের অনূভুতি হ্রাস পায়।এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়া নিরাপদ এবং পুষ্টিকর হতে পারে। এতে ভিটামিন এ, সি, ফাইবার, ফোলেট এবং আয়রন সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান থাকে।
  • ভিটামিন এঃ কাঁচা আম ভিটামিন এ-এর একটি ভাল উৎস, যা গর্ভাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শিশুর দৃষ্টিশক্তি ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়।
  • ভিটামিন সিঃ কাঁচা আম ভিটামিন সি-এর আরেকটি ভালো উৎস, যা গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং কোষের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে।
  • ফাইবারঃ কাঁচা আমে ফাইবার থাকে, যা গর্ভাবস্থায় সাধারণ কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
  • ফোলেটঃ কাঁচা আম ফোলেটের একটি ভালো উৎস, যা গর্ভাবস্থায় নিউরাল টিউব ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • আয়রনঃ কাঁচা আমে লোহা থাকে, যা গর্ভাবস্থায় অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • পটাশিয়ামঃ কাঁচা আম পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • ম্যাগনেসিয়ামঃ কাঁচা আম ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা গর্ভাবস্থায় পেশীর সংকোচন এবং স্নায়ু কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
অন্যান্য উপকারিতাঃ

  • মর্নিং সিকনেস হ্রাস করতে পারেঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম মর্নিং সিকনেসের লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে।
  • জ্বর কমাতে পারেঃ গর্ভাবস্থায় কাঁচা আমের জ্বর কমাতে সাহায্য করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে মনে করা হয়।
  • পাচন উন্নত করতে পারেঃ কাঁচা আমে এনজাইম থাকে যা হজম উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
  • ত্বকের যত্নঃ কাঁচা আমে ভিটামিন এ থাকে, যাগর্ভাবস্থায় ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
  • শক্তির স্তর বৃদ্ধি করতে পারেঃ কাঁচা আম প্রাকৃতিক চিনি সমৃদ্ধ, যা গর্ভাবস্থায় শক্তির স্তর বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।
সতর্কতাঃ যদিও কাঁচা আম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী হতে পারে, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এতে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url