ক্লাউড কম্পিউটিং কি? দৈনন্দিন জীবনে ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যবহার

আপনি যদি জানতে চান, ক্লাউড কম্পিউটিং কি? দৈনন্দিন জীবনে ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যবহার এবং ক্লাউড কম্পিউটিং কিভাবে কাজ করে, এর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান,তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
ক্লাউড কম্পিউটিং কি? দৈনন্দিন জীবনে ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যবহার
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির জগতে, ক্লাউড কম্পিউটিং বিপ্লবের চেয়ে কম কিছুই নয়। এটি ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য কম্পিউটিং রিসোর্স অ্যাক্সেস এবং ব্যবহারের ধরনকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করেছে। ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ধারণা হল ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিষেবা হিসেবে কম্পিউটিং রিসোর্স সরবরাহ করা। এর মানে হল যে ব্যবহারকারীরা তাদের নিজস্ব হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার ইনস্টল বা পরিচালনা না করেই সার্ভার, স্টোরেজ, ডাটাবেস, নেটওয়ার্কিং, সফ্টওয়্যার, অ্যানালিটিকস এবং আরও অনেক কিছু অ্যাক্সেস এবং ব্যবহার করতে পারে।

ক্লাউড কম্পিউটিং কি?

ক্লাউড কম্পিউটিং হল ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কম্পিউটিং রিসোর্স, যেমন সার্ভার, স্টোরেজ, ডেটাবেজ, নেটওয়ার্ক, সফ্টওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি ভাড়া করে নেওয়ার ব্যবস্থা। ধরুন আপনার একটি ব্যবসা আছে এবং আপনার প্রচুর ডেটা স্টোরেজ ও প্রসেসিং পাওয়ারের প্রয়োজন। কিন্তু নিজেরাই সবকিছু কিনতে ও পরিচালনা করতে হলে অনেক খরচ ও ঝামেলা হবে। এখানেই ক্লাউড কম্পিউটিং আপনার কাজে লাগবে।

সহজ কথায় বলতে গেলে, ক্লাউড কম্পিউটিং হল ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটিং রিসোর্স সরবরাহ করার একটি ব্যবস্থা। এটি ব্যবহারকারীদের তাদের নিজস্ব হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার ইনস্টল এবং পরিচালনা না করেই সার্ভার, স্টোরেজ, ডাটাবেস, নেটওয়ার্কিং, সফটওয়্যার, অ্যানালিটিকস এবং আরও অনেক কিছু অ্যাক্সেস করতে দেয়।

অর্থাৎ, Cloud computing বলতে বোঝায় বিভিন্ন ধরনের ডাটা এবং প্রোগ্রামসমূহকে নিজ কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভে রাখার পরিবর্তে ইন্টারনেটে রেখে ইন্টারনেটের মাধ্যমে manage, process এবং access করার সেবা বা সুবিধা ভোগ করা। যেমন Amazon Web Services (AWS), Microsoft Azure, Google Cloud Platform (GCP) ইত্যাদি, তাদের ডেটা সেন্টারে বিপুল পরিমাণে কম্পিউটিং রিসোর্স রাখে। আপনি তাদের কাছ থেকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী রিসোর্স ভাড়া করে নিতে পারেন।

ক্লাউড কম্পিউটিং কিভাবে কাজ করে

ক্লাউড কম্পিউটিং মূলত ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কম্পিউটিং রিসোর্স, যেমন সার্ভার, স্টোরেজ, ডাটাবেজ, নেটওয়ার্ক, অ্যাপ্লিকেশন এবং সার্ভিস, চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহারকারীদের কাছে সরবরাহ করে। এটি একটি "সার্ভিস অ্যাজ-এ-নিড" (SaaS) মডেল অনুসরণ করে, যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুসারে রিসোর্স ভাড়া নিতে পারে এবং প্রদানকারীর কাছে মালিকানা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারে।

ডেটা সেন্টার: ক্লাউড কম্পিউটিং বিশাল ডেটা সেন্টারের একটি নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করে যা বিশ্বজুড়ে অবস্থিত। এই ডেটা সেন্টারগুলিতে হাজার হাজার সার্ভার, স্টোরেজ ডিভাইস এবং নেটওয়ার্কিং যন্ত্রপাতি রয়েছে যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত।

ভার্চুয়ালাইজেশন: ভার্চুয়ালাইজেশন নামক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, একাধিক ভার্চুয়াল মেশিন (VM) একটি একক শারীরিক সার্ভারে চালানো সম্ভব হয়। প্রতিটি VM-এর নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম, অ্যাপ্লিকেশন এবং ডেটা থাকতে পারে। প্রতিটি ভার্চুয়াল মেশিন একটি আলাদা আলাদা অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপ্লিকেশন চালাতে পারে। ব্যবহারকারীরা ওয়েব ব্রাউজার, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা API ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই VM-এর সাথে যোগাযোগ করতে পারে। তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কম্পিউটিং রিসোর্স, যেমন স্টোরেজ, প্রসেসিং পাওয়ার এবং মেমরি ভাড়া নিতে পারে।

সেবা: ক্লাউড প্রদানকারীরা বিভিন্ন ধরণের ক্লাউড সেবা অফার করে, যার মধ্যে রয়েছে
  • সফ্টওয়্যার অ্যাজ আ সার্ভিস (SaaS): এই মডেলে, অ্যাপ্লিকেশনগুলি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাবস্ক্রিপশনের ভিত্তিতে সরবরাহ করা হয়। ব্যবহারকারীদের অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল বা পরিচালনা করার প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, Gmail এবং Salesforce SaaS অ্যাপ্লিকেশনের জনপ্রিয় উদাহরণ।
  • প্ল্যাটফর্ম অ্যাজ আ সার্ভিস (PaaS): এই মডেলে, ডেভেলপাররা ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, পরীক্ষা এবং চালনা করতে পারেন। PaaS প্ল্যাটফর্মগুলি অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং পরিষেবাগুলি সরবরাহ করে। উদাহরণস্বরূপ, Google App Engine এবং Microsoft Azure বিখ্যাত PaaS প্ল্যাটফর্ম।
  • ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাজ আ সার্ভিস (IaaS): এই মডেলে, ব্যবহারকারীরা ভার্চুয়াল সার্ভার, স্টোরেজ, নেটওয়ার্কিং এবং অন্যান্য কম্পিউটিং রিসোর্স ভাড়া নিতে পারে। IaaS ব্যবহারকারীদের তাদের নিজস্ব অবকাঠামো পরিচালনা করার স্বাধীনতা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, Amazon Web Services (AWS) এবং Google Cloud Platform (GCP) জনপ্রিয় IaaS প্রদানকারী।
স্কেলেবিলিটি: ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহারকারীদের তাদের চাহিদা অনুযায়ী রিসোর্স স্কেল আপ বা স্কেল ডাউন করার সুবিধা প্রদান করে। যখন ব্যবহারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, তখন নতুন ভার্চুয়াল মেশিন যোগ করা যেতে পারে। অন্যদিকে, যখন চাহিদা কমে যায়, তখন ভার্চুয়াল মেশিন বন্ধ করা যেতে পারে।

পে-অ্যাজ-ইউ-গো: ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহারকারীদের ব্যবহৃত রিসোর্সের জন্য মাত্র অর্থ প্রদান করতে হয়। এটি ব্যবসাগুলিকে তাদের আইটি খরচ কমাতে এবং তাদের বাজেট আরও নমনীয় করতে সাহায্য করে। ব্যবহারকারীরা যখন রিসোর্স ব্যবহার করে না তখন তারা সেগুলি ছেড়ে দিতে পারে, যা তাদের অর্থ সাশ্রয় করতে সাহায্য করে।

অ্যাক্সেস: ব্যবহারকারীরা ওয়েব ব্রাউজার, মোবাইল অ্যাপ বা ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ক্লাউড রিসোর্স অ্যাক্সেস করতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনে ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যবহার

দৈনন্দিন জীবনে ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যবহার

আধুনিক যুগে, ক্লাউড কম্পিউটিং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর প্রভাব অনুভূত হয়। ক্লাউড-ভিত্তিক পরিষেবা আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে, কার্যকারিতা বৃদ্ধি করছে এবং নতুন সম্ভাবনার দরজা উন্মোচন করছে।
  • ইমেইল ও যোগাযোগ: জিমেইল, আউটলুক, ইয়াহু মেইল এর মতো জনপ্রিয় ইমেইল পরিষেবা ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে। এটি ব্যবহারকারীদের যেকোনো ডিভাইস থেকে তাদের ইমেইল অ্যাক্সেস এবং পরিচালনা করতে দেয়। এছাড়াও, জুম, স্কাইপ, গুগল মিট এর মতো ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ্লিকেশনও ক্লাউড-ভিত্তিক, যা দূরবর্তী যোগাযোগকে সহজ করে তোলে।
  • ফাইল স্টোরেজ ও ব্যাকআপ: গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স, ওয়ানড্রাইভ এর মতো ক্লাউড স্টোরেজ পরিষেবা ব্যবহারকারীদের তাদের ফাইল, ছবি, ভিডিও অনলাইনে সংরক্ষণ করতে দেয়। এটি ডেটা ব্যাকআপ এবং অ্যাক্সেসকে সহজ করে তোলে, যেকোনো ডিভাইস থেকে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া: ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এর মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের উপর নির্ভর করে। এটি বিশ্বব্যাপী বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সাথে সংযোগ স্থাপন এবং তথ্য শেয়ার করার ক্ষমতা প্রদান করে।
  • অ্যাপ্লিকেশন ও সফ্টওয়্যার: অ্যাডোবি ক্রিয়েটিভ স্যুট, মাইক্রোসফট অফিস 365 এর মতো অনেক জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন এখন ক্লাউড-ভিত্তিক। এটি ব্যবহারকারীদের সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে সফ্টওয়্যার অ্যাক্সেস করতে দেয়, যা ইনস্টলেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের ঝামেলা দূর করে।
  • বিনোদন: নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও, ডিজনি+ এর মতো স্ট্রিমিং পরিষেবা ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে। এটি ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী বিস্তৃত মনোরঞ্জনের সামগ্রী অ্যাক্সেস করতে দেয়।
  • শিক্ষা: অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম যেমন কান একাডেমি, Coursera ক্লাউড-ভিত্তিক।
এছাড়াও, ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে আরও অনেক রকমের সেবা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন, অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, গেমিং, ইত্যাদি।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে, ক্লাউড কম্পিউটিং কেবল একটি বিকল্প নয়, বরং ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিগত ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে বৃহৎ আন্তর্জাতিক কর্পোরেশন পর্যন্ত সকল স্তরের প্রতিষ্ঠান ক্লাউড কম্পিউটিং-এর সুবিধা গ্রহণ করছে তাদের কার্যকারিতা, দক্ষতা এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্য।
  • প্রাথমিক খরচ হ্রাস: ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ব্যয়বহুল হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এড়াতে পারে। পরিবর্তে, তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ক্লাউড-ভিত্তিক পরিষেবা ভাড়া নিতে পারে, যা তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।
  • স্থিতিশীল ব্যয়: ক্লাউড কম্পিউটিং একটি "পে-অ্যাজ-ইউ-গো" মডেল অনুসরণ করে, যার অর্থ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে কেবলমাত্র সেই পরিমাণ রিসোর্সের জন্যই অর্থ প্রদান করতে হয় যা তারা ব্যবহার করে। এর ফলে অপ্রয়োজনীয় খরচ হ্রাস পায় এবং ব্যবসায়িক ব্যয়ের পূর্বাভাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
  • দ্রুত স্কেলেবিলিটি: ব্যবসায়িক চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে ক্লাউড কম্পিউটিং রিসোর্সগুলি দ্রুত ও সহজেই স্কেল করা সম্ভব। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের সময় অতিরিক্ত রিসোর্স যোগ করতে পারে এবং চাহিদা কমে গেলে খরচ কমাতে রিসোর্স কমাতে পারে।
  • অ্যাক্সেসযোগ্যতা: ইন্টারনেট সংযোগ সহ যেকোনো ডিভাইস থেকে ক্লাউড কম্পিউটিং রিসোর্স অ্যাক্সেস করা সম্ভব। কর্মীরা অফিসের বাইরে থেকেও কাজ করতে পারে, যা তাদের কর্মক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে।
  • উন্নত সহযোগিতা: ক্লাউড-ভিত্তিক সরঞ্জাম ও অ্যাপ্লিকেশনগুলি বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতা সহজতর করে তোলে। একই সাথে একই ডকুমেন্টে কাজ করা, রিয়েল-টাইমে বার্তা আদান-প্রদান করা এবং ভাগ করা ফোল্ডার ব্যবহার করা সম্ভব।
  • ডেটা বিশ্লেষণ এবং মেশিন লার্নিং: ক্লাউড প্ল্যাটফর্মগুলি বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ এবং মেশিন লার্নিং অ্যাপ্লিকেশনগুলি সহজে চালানোর ক্ষমতা প্রদান করে, যা নতুন অন্তর্দৃষ্টি এবং ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি করে।
  • এআই এবং IoT অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য সহায়তা: ক্লাউড কম্পিউটিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য একটি দ্রুত এবং স্কেলেবল অবকাঠামো প্রদান করে, যা নতুন পণ্য এবং পরিষেবা তৈরির সম্ভাবনা হয়ে থাকে।
ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা তাদের খরচ কমাতে, দক্ষতা বৃদ্ধি করতে, সহযোগিতা উন্নত করতে এবং নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে পারে।
ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিসের প্রকারভেদ

ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিসের প্রকারভেদ

ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিস বিভিন্ন ধরণের পরিষেবা প্রদান করে যা ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডেটা এবং অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্সেস করতে দেয়। ক্লাউড কম্পিউটিং তিন ভাবে সার্ভিস দিয়ে থাকে। সার্ভিসের প্রধান তিনটি মডেল হল:
  • Infrastructure as a Service (IaaS): এটি ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল মেশিন, স্টোরেজ, নেটওয়ার্কিং এবং অন্যান্য কম্পিউটিং সম্পদ ভাড়া দেয়। ব্যবহারকারীরা তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি IaaS-এ ইনস্টল এবং পরিচালনা করতে পারেন।
উদাহরণ: Amazon Elastic Compute Cloud (EC2), Microsoft Azure Virtual Machines, Google Compute Engine (GCE)
  • Platform as a Service (PaaS): এটি ডেভেলপারদের অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, পরীক্ষা এবং deploy করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। PaaS ডেভেলপারদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ম্যানেজমেন্টের ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয়।যাতে তারা অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারে।
উদাহরণ: Amazon Web Services (AWS) Elastic Beanstalk, Microsoft Azure App Service, Google App Engine
  • Software as a Service (SaaS): এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন প্রদান করে। ব্যবহারকারীদের অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল বা পরিচালনা করার প্রয়োজন নেই,কারণ সেগুলি ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা হয়। SaaS ব্যবহারের জন্য সাধারণত কম প্রাথমিক বিনিয়োগ এবং দ্রুত ডেপ্লয়মেন্টের সুবিধা থাকে।
উদাহরণ: Gmail, Salesforce, Dropbox

অন্যান্য ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে:
  • Database as a Service (DBaaS): এটি ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল ডাটাবেস প্রদান করে।
  • Security as a Service (SaaS): এটি ব্যবহারকারীদের ফায়ারওয়াল, ভাইরাস স্ক্যানিং এবং অন্যান্য নিরাপত্তা পরিষেবা প্রদান করে।
  • Analytics as a Service (AaaS): এটি ব্যবহারকারীদের ডেটা বিশ্লেষণ এবং বিজ্ঞপ্তি সরঞ্জাম প্রদান করে।
  • Internet of Things (IoT) as a Service (IaaS): এটি ব্যবহারকারীদের IoT ডিভাইস এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি পরিচালনা করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে।
ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিসের ধরণ নির্বাচন করার সময়, ব্যবসাগুলি তাদের নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা বিবেচনা করা উচিত।
  • ব্যয়: বিভিন্ন ধরণের ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবার বিভিন্ন মূল্য পয়েন্ট রয়েছে।
  • স্কেলেবিলিটি: ব্যবসাগুলির এমন একটি পরিষেবা নির্বাচন করতে হবে যা তাদের প্রয়োজন অনুসারে স্কেল আপ বা ডাউন করা যেতে পারে।
  • নিরাপত্তা: ব্যবসাগুলির এমন একটি পরিষেবা নির্বাচন করতে হবে যা তাদের ডেটা এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি সুরক্ষিত রাখে।
  • অনুপ্রয়োগযোগ্যতা: ব্যবসাগুলির এমন একটি পরিষেবা নির্বাচন করতে হবে যা তাদের বিদ্যমান সিস্টেম এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর অসুবিধা

ক্লাউড কম্পিউটিং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব এনেছে, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য ডেটা অ্যাক্সেস এবং স্টোরেজের নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে। যেকোনো প্রযুক্তির মতো, ক্লাউড কম্পিউটিং এরও কিছু অসুবিধা রয়েছে। তবে, ক্লাউড কম্পিউটিং গ্রহণের পূর্বে, এর কিছু অসুবিধা সম্পর্কেও সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে সাথে ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
  • নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা: ডেটা ক্লাউডে সংরক্ষণ করা হয়, যার মানে হল যে আপনার ডেটার উপর আপনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। ডেটা লিক বা হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • ইন্টারনেট নির্ভরতা: ক্লাউড অ্যাপ্লিকেশন এবং পরিষেবাগুলি ব্যবহার করার জন্য একটি স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে আপনি সেগুলি অ্যাক্সেস করতে পারবেন না।
  • খরচ: কিছু ক্ষেত্রে, ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যয়বহুল হতে পারে। আপনাকে ব্যবহৃত পরিষেবার জন্য নিয়মিত ফি প্রদান করতে হবে, যা আপনার বাজেটের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  • নিয়ন্ত্রণের অভাব: কিছু ক্ষেত্রে, আপনার ক্লাউড অবকাঠামো এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলির উপর সীমিত নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে। এটি আপনার ডেটা এবং সিস্টেমগুলি পরিচালনা করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • ভেন্ডর লক-ইন: আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট ক্লাউড প্রদানকারীর উপর নির্ভরশীল হন তবে আপনার স্যুইচ করা কঠিন হতে পারে। এর ফলে আপনার বিকল্পগুলি সীমাবদ্ধ হতে পারে এবং দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • কম্প্লায়েন্স: কিছু শিল্পে, ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করার জন্য কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলতে হতে পারে। আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি সমস্ত প্রযোজ্য নিয়মকানুন মেনে চলছেন।
ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই অসুবিধাগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নির্দিষ্ট চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তাগুলি মূল্যায়ন করা এবং ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধাগুলি আপনার জন্য ঝুঁকিগুলি ছাড়িয়ে যায় কিনা তা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক এর শেষ কথা

আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটিতে, ক্লাউড কম্পিউটিং কি? দৈনন্দিন জীবনে ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যবহার এবং ক্লাউড কম্পিউটিং কিভাবে কাজ করে, এর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য কিছুটা হলেও জানতে পেরেছেন। ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা তাদের খরচ কমাতে, দক্ষতা বৃদ্ধি করতে, সহযোগিতা উন্নত করতে এবং নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে পারে।

এতক্ষণ আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি এই ধরনের তথ্য আরো জানতে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url