কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সন্তান জন্মের পূর্বে ও পরে মা-বাবার করণীয়
আপনি যদি জানতে চান,কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সন্তান জন্মের পূর্বে ও পরে মা-বাবার করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান,তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
প্রত্যেক পিতা-মাতার বিবাহবন্ধনের পর তাদের আশা বা স্বপ্ন থাকে পিতৃীত্ব এবং মাতৃত্ব স্বাদ গ্রহণ করা।ইসলামে সন্তান জন্ম একটি আশীর্বাদ এবং অত্যন্ত আনন্দের ও বরকতময় ঘটনা হয়ে থাকে। নবজাতক শিশু আল্লাহর এক অমূল্য দান, যার যত্ন নেওয়া ও সঠিকভাবে লালন-পালন করা মা-বাবার কর্তব্য।
কুরআন ও সুন্নাহতে সন্তান জন্মের পূর্বে ও পরে মা-বাবাদের জন্য নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে, যা অনুসরণ করলে তারা তাদের সন্তানকে একজন সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও আল্লাহভীরু মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।
সহবাসের পূর্বে দোয়া এবং শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া
শয়তান থেকে শিশুকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সহবাসের সময় দোয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন কারণ মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে শয়তান। শয়তান ঘোষণা দিয়ে মানুষের সঙ্গে শত্রুতা শুরু করেছে ,
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে জানিয়েছেন শয়তান আমাদেরকে বিপদগামী করবে এবং জাহান্নামের নিয়ে ছাড়বে এবং সে একা যাবে না জাহান্নামে আমাদেরকে নিয়ে যাবে। শয়তান মানুষের চিরশত্রু এই কথা আমরা সবাই জেনে থাকি।
এজন্য একজন সচেতন বা হিতাকাঙ্খী অভিভাবক হিসেবে সন্তানের জন্য প্রথম করণীয় হলো সন্তানটি যেন দুনিয়াতে আসার পরে এই দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় শত্রুর শত্রুতা থেকে নিরাপদ থাকতে পারে। এর জন্য প্রত্যেক পিতা-মাতার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় চেয়ে দোয়া করা।
بِسْمِ اللَّهِ ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বনা অজান্নিবিশ শায়ত্বনা মা রাযাকতানা।
অর্থঃ আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি। হে আল্লাহ! তুমি শয়তানকে আমাদের নিকট থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে (সন্তান) দান করবে তার থেকেও শয়তানকে দুরে রাখ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ দোয়া পাঠের পর যদি তাদের দুজনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অর্থাৎসন্তান হয়, তাকে শয়তান কখনও ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ১৪১, মুসলিম ৩৬০৬নং)
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে গর্ভবতী মায়ের পড়াশোনা
ইসলামে, জ্ঞান অর্জনকে একটি উচ্চ মর্যাদার কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্যও পড়াশোনা ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়ে থাকে। কুরআন ও সুন্নাহতে এমন অনেক নির্দেশিকা রয়েছে যা গর্ভবতী মায়েদের পড়াশোনা ও শিক্ষা অব্যাহত রাখতে অনুপ্রাণিত করে থাকে।
একটি শিশু এসে একটি নারীর জীবনকে ধন্য করে তোলে। একজন নারী আরেক জীবনে পদার্পণ করেন মাতৃস্নেহ নিয়ে, প্রথম সন্তান জন্মের সঙ্গেই একজন মায়ের ও নতুন করে জন্ম হয়ে থাকে। প্রকৃত মা সেই যে কিনা সঠিকভাবে সন্তান প্রতিপালন করেন।মা হওয়ার জন্য কেবল জন্মদাত্রী হাওয়াই যথেষ্ট নয়।
কিন্তু একজন মুসলিম মায়ের দায়িত্ব অন্যান্য মায়েদের চেয়ে আরো অনেক বেশি হয়ে থাকে। সন্তান প্রতিপালন করার সাধারণ পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি আরও অতিরিক্ত পড়াশোনা করবেন। তবে তার সন্তানকে আদর্শ মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলবেন ও কিভাবে তার সন্তানের অন্তরে সঠিক দিনের আলো প্রবেশ করাবেন সেই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
সেজন্য প্রয়োজন ইসলামী শিশু সাহিত্য করা আল কুরআনের তাফসীর পড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী পড়া ও সাহাবী কেরামদের জীবনী পড়া।গর্ভবতী অবস্থায় মায়েরা সাধারণত হাতে অনেক সময় পেয়ে থাকেন ইসলামের উপর পড়াশোনা করে উপযুক্ত জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন এই সময়ে এবং এতে আপনার অনেক মানসিক শান্তিও পেয়ে থাকবেন।
- হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, "নবী (সাঃ) জ্ঞান অর্জনকারীদের ভালোবাসতেন এবং তাদের প্রশংসা করতেন।" (সহীহ মুসলিম)
- হজরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, "জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য ফরজ।" (তিরমিযি)
মায়ের গর্ভে শিশুশিক্ষা পর্ব
প্রত্যেক মায়ের গর্ভে ৪০ দিন পর্যন্ত বীর্য আকারে অবস্থান করে; অতঃপর পরবর্তী ৪০ দিন জমাট রক্তে পরিণত হয়; এরপর এমনিভাবে তা আরো ৪০ দিনের মধ্যে মাংসের টুকরায় পরিণত হয়; অতঃপর আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে প্রেরণ করেন, যাকে মানব শিশুটির ব্যাপারে চারটি বিষয় অর্থাৎ তার রিজিক, আয়ুষ্কাল, ভাগ্যের ভালো ও মন্দ সম্পর্কে লিখতে বলে থাকেন। এরপর উক্ত মানব ভ্রুনের মধ্যে আত্মা বা জীবন দিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।( সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)মেডিকেল সাইন্স বলে গর্ভবতী হওয়ার পর প্রথম মাসেই শিশুর হৃৎপিণ্ড তৈরি হয় এবং গর্ভধারণের দেড় মাসের মধ্যে শিশুর হৃৎপিণ্ড কাজ করতে শুরু করে। পরবর্তী দুই মাসের ভেতর তার হাত-পা এবং অন্যান্য অঙ্গসমূহ তৈরি হয়ে যায়। তিন মাস পর থেকে সে ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে এবং পাঁচ মাস থেকে শুনতে পায়। তাই তৃতীয় মাস থেকে মায়ের উচিত আস্তে আস্তে পড়ার পরিবর্তে জোরে জোরে কুরআন হাদিস পড়া, সুন্দর করে শব্দ করে কোরআন তেলাওয়াত করা।
পঞ্চম মাস থেকে গর্ভের সন্তানের সাথে একা একা কথা বলা যেতে পারে এবং সাহাবায়ে কেরামদের জীবনী, ইসলামী দীনি জ্ঞান এবং তাকে ভালো ভালো কথা শোনানো যেতে পারে। যদি এটা প্রথম সন্তান হয় তবে গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহ পর শিশুর প্রথম নড়াচড়া টের পাওয়া যায়। আর প্রথম গর্ভ না হয় যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয় অথবা আরো পরবর্তী গর্ভ হয় তাহলে গর্ভধারণ ১৬ থেকে ১৮ সপ্তাহ পরেই মা শিশুর নড়াচড়া টের পায়।
মায়ের গর্ভে সন্তান নাভির মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করে তিল তিল করে বড় হতে থাকে। তাই মায়ের চরিত্রের যথেষ্ট প্রভাব সন্তানের উপর পড়ে থাক। কোন মা যদি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে নিয়মিত হয়ে না থাকেন তাহলে এ সময় থেকেই তাকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে নিয়মিত হয়ে যাওয়া উচিত। মায়ের মধ্যে যে সকল দোষ ত্রুটিগুলো রয়েছে সেগুলো এ সময় থেকেই আস্তে আস্তে করে কমিয়ে নিয়ে আসা উচিত এবং না করাই ভালো।
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সন্তান জন্মের পূর্বে মায়ের সতর্কতা
গর্ভাবস্থা একটি নারীর জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পরিবর্তনশীল সময়। এই সময়কালে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে একজন মুসলিম নারীর জন্য।কুরআন ও সুন্নাহ গর্ভবতী মায়েদের জন্য নির্দেশিকা ও সতর্কতার একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডার সরবরাহ করে। এই নির্দেশিকাগুলি শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে না, বরং মানসিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশকেও উৎসাহিত করে যা মাতৃত্বের জন্য অপরিহার্য।
শারীরিক দিক সমুহ
- পুষ্টিকর খাদ্য: গর্ভবতী মায়েদের জন্য একটি সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল, শাকসবজি, শস্য, মাংস, মাছ, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়াও, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফোলেট, ভিটামিন এ, ডি ও ই সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে, অতিরিক্ত চিনি, লবণ, তেলযুক্ত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।অপর্যাপ্ত পুষ্টি শিশুর বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- নিয়মিত ব্যায়াম: হাঁটা, সাঁতার কাটা, গর্ভবতীদের জন্য যোগব্যায়ামের মতো নিয়মিত ব্যায়াম শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং প্রসবের জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম: প্রতিদিন ৭-৯ ঘন্টা ঘুমানো এবং দিনের বেলায় বিশ্রামের জন্য সময় বের করা গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত বিশ্রাম শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা: নিয়মিত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি যেকোনো জটিলতা দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসা করতে সাহায্য করে।
- মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন: গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মেজাজের দ্রুত পরিবর্তন, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা এবং প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
- মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা: গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মেজাজের দ্রুত পরিবর্তন, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, প্রিয়জনের সাথে কথা বলা, বই পড়া, শখ অনুশীলন করা ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক চাপ কমিয়ে আনা যেতে পারে। প্রয়োজনে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
- ইতিবাচক চিন্তাভাবনা: ইতিবাচক চিন্তাভাবনা মনকে শান্ত রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। সুন্দর জিনিসের কথা চিন্তা করা, প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো এবং ইতিবাচক বই পড়া ইতিবাচক চিন্তাভাবনা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- পরিবার ও বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ: পরিবার ও বন্ধুদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা মানসিকভাবে ভালো থাকতে সাহায্য করে। তাদের সাথে আলোচনা করা, সমস্যা শেয়ার করা এবং তাদের সহায়তা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য: যদি মানসিক চাপ অত্যধিক হয় বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিত।
- ধৈর্য ধরা: গর্ভাবস্থা ও প্রসব একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এই সময়ে ধৈর্য ধরা এবং ধৈর্য্যশীল থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
আধ্যাত্মিক সতর্কতা সমূহ
- নিয়মিত নামাজ আদায়: নিয়মিত নামাজ আদায় করা আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন করতে এবং মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে। নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলিমা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তাঁর কাছে সাহায্য ও রহমতের প্রার্থনা জানায় এবং তাঁর প্রতি নম্রতা প্রদর্শন করে।
- দোয়া ও জিকির: নিয়মিত দোয়া ও জিকির পড়া আল্লাহর কাছে সাহায্য ও রহমতের প্রার্থনা জানায়। দোয়া ও জিকির মনের একাগ্রতা বৃদ্ধি করে এবং আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
- কুরআন তিলাওয়াত: কুরআন তিলাওয়াত আল্লাহর বাণী শুনতে এবং হৃদয়কে শান্ত করতে সাহায্য করে। কুরআনের আয়াতগুলি মেনে চলার মাধ্যমে একজন মুসলিমা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে।
- সৎ ও ন্যায়ের পথে থাকা: মিথ্যা বলা, পরনিন্দা, গিবত করা এড়িয়ে চলা এবং সৎ ও ন্যায়ের পথে থাকা আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সৎ ও ন্যায়ের পথে থাকার মাধ্যমে একজন মুসলিমা আল্লাহর পছন্দ লাভ করতে পারে।
- দান-সদকা: দরিদ্র ও অভাবীদের সাহায্য করা আল্লাহর কাছে রহমত লাভের মাধ্যম। দান-সদকার মাধ্যমে একজন মুসলিমা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে এবং তাঁর রহমতের যোগ্য হতে পারে।
- ধৈর্য ও সহনশীলতা: ধৈর্য ও সহনশীলতা অবলম্বন করা গর্ভাবস্থার চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করতে এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে একজন মুসলিমা আল্লাহর পুরস্কার লাভ করতে পারে।
উপরোক্ত আধ্যাত্মিক সতর্কতাগুলি মেনে চলার মাধ্যমে একজন গর্ভবতী মা আল্লাহর নিকটতা লাভ করতে পারেন, মনকে শান্ত করতে পারেন এবং একটি সুস্থ ও ধার্মিক সন্তানের জন্মদানে সক্ষম হতে পারেন।
সন্তান জন্মের আগে দোয়া সমূহ
رَبِّ إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّي ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
রাব্বি ইন্নী নাযারতুলাকা মা-ফী বাতনী মুহাররারান ফাতাকাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাছ ছামী‘উল ‘আলীম।
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমার গর্ভে যা রয়েছে, তা আমি মুক্ত করে (জন্মের পর) আপনার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলাম, সুতরাং আপনি আমা হতে তা গ্রহণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।(সূরা আল ইমরান আয়াত ৩৫)
رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ
রাব্বি হাবলী মিল্লাদুনকা যুররিইইয়াতান তাইয়িবাতান ইন্নাকা ছামী‘উদ্দু‘আই।
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আপনার নিকট হতে পুত ও পবিত্র সন্তান প্রদান করুন নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (সূরা আল ইমরান আয়াত ৩৮ )
رَبَّنَا ہَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّاجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا
রাব্বানা-হাবলানা-মিন আঝওয়া-জিনা ওয়া যুররিইইয়া-তিনা কুররাতা আ‘ইউনিওঁ ওয়াজ‘আলনা-লিল মুত্তাকীনা ইমা-মা।
অর্থঃ হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে এমন সন্তনাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন। (সূরা ফুরকান আয়াত ৭৪)
সন্তান জন্মের আগে মা-বাবার নৈতিক দায়িত্ব
- মা-বাবা উভয়ে উত্তম ও ভালো কাজের নিয়ত করা।
- মা-বাবা উভয়ে হালাল উপার্জন করা।
- মা-বাবা উভয়ে হালাল খাবার খাওয়া।
- ওয়াক্ত মতো দৈনিক পাঁচ সালাত আদায় করা।
- সম্ভব হলে মাঝে মাঝে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা এবং সিজদায় গিয়ে বেশি বেশি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।
- সালাতের পর তাসবীহ পাঠ করা এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার ও দোয়া করা।
- দুজনেই খুব বেশি বেশি ভালো কাজ করা এবং বেশি বেশি দান করা।
- প্রতিদিন আল কুরআন অর্থসহ তেলাওয়াত করতে চেষ্টা করা।
- নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা এবং শোন।
- ইসলামের উপর অন্যান্য বই অধ্যয়ন করা এবং সাহাবায়ে কেরামদের জীবনী পড়া।
- ইসলামের উপর নির্দেশিত হাদিস সুন্নাহ হিসেবে জীবন যাপন করা।
- মানুষের সাথে আরও বেশি ভালো আচরণ করা।
- গরিবদের এবং এতিমদের সাথে ভালো আচরণ করা এবং তাদেরকে সাহায্য করা।
- গীবত বা পরনিন্দা, কুৎসা রটনা, অহংকার ও দাম্ভিকতাপূর্ণ অসুন্দর বা খারাপ কথা বলা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।
- টিভি বা ইন্টারনেটে অশ্লীল নাচ, গান, সিরিয়াল, নাটক, সিনেমা না দেখা।
- ঝগড়াঝাটি না করা, কাউকে মনে কষ্ট না দেওয়া এবং গালিগালাজ না করা।
- রাগ কমিয়ে সব সময় হাসি মুখে থাকার চেষ্টা করা এবং সবার সাথে হাসি খুশি ভাবে কথা বলা।
- আল্লাহর নিকট বেশি বেশি অনুগত হওয়া ও ক্ষমাপ চাওয়া এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়া।
সন্তান জন্মের পর প্রথম দিনের দায়িত্ব
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে অন্য কোন কথা বা শব্দ শিশুর কানে প্রবেশ করার পূর্বে তার কানে আল্লাহর নাম প্রবেশ করানো উত্তম।তারপর যা করণীয় তা হল-
দোয়া করাঃ শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাওয়া এবং বদ নজর থেকে বেঁচে থাকার জন্য দোয়া করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শয়তান প্রত্যেক শিশুকেই তার জন্মের সময় আঘাত করে,সেই কারণেইনে শিশু চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। কিন্তু মারইয়াম ও ঈসা আঃ এটা হতে রক্ষা পেয়েছিলেন, দোয়াটি নিম্নরূপ-
اِنِّیۡۤ اُعِیۡذُہَا بِکَ وَذُرِّیَّتَہَا مِنَ الشَّیۡطٰنِ الرَّجِیۡمِ
ইন্নী উ‘ঈযুহা-বিকা ওয়া যুররিইইয়াতাহা-মিনাশশাইতানির রাজীম।
অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি তাকে ও তার সন্তানগণকে বিতাড়িত শয়তান হতে আপনার আশ্রয়ে সমর্পণ করলাম। (সূরা আল ইমরান আয়াত ৩৬)
শুকরিয়া আদায় করাঃ সন্তান জন্মের সংবাদ শোনার পর আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা এর নিকট সন্তান জন্মের সংবাদ আসলে তিনি জিজ্ঞেস করতেন সন্তানটি সুস্থ স্বাভাবিক কিনা। যদি বলা হতো হ্যাঁ তিনি বলতেন, "আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন" (সহিহ বুখারী)
আযান শোনানোঃ নবজাতক সন্তান ছেলে হোক আর মেয়ে হোক উভয়ের ক্ষেত্রেই ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ডান কানে আজান বলা সুন্নাত। এ সময় আযান মসজিদে মুয়াজ্জিনের মত সুর করে জোরে জোরে দিতে হবে না আযানের প্রতিটি শব্দ তার কানের কাছে মুখ দিয়ে আস্তে আস্তে উচ্চারণ করে বললেই হবে।
তাহনীক করাঃ ভূমিষ্ঠ শিশুর মাতা সামান্য খেজুর চিবিয়ে তারপর শিশুর মুখের নালার সাথে মিশ্রিত করে আঙ্গুল দ্বারা মুখের ভেতর জিহ্বার তালুতে লাগিয়ে দেওয়া সুন্নাহ। তবে যাদের মুখে অসুখ রয়েছে বা যারা পান সিগারেট খান তাদের এই কাজটি করা উচিত নয়।
দুধ পান করানোঃ সন্তানের জন্য মায়ের পক্ষ থেকে প্রথম উপহার হলো মায়ের দুধ। এটি ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের জন্য পরিপূর্ণ খাদ্য। এতে আল্লাহ তা'আলা শিশুর যা প্রয়োজন তার সকল উপাদান দিয়ে দিয়েছেন।
সন্তানের কল্যাণের জন্য পিতার দোয়া করাঃ পিতা সন্তানের কল্যাণের জন্য বা বরকতের জন্য দোয়া করবেন। যাতে সন্তান দ্বীনদার হয়, মেধাবী হয়, মুত্তাকী হয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর কাছে নবজাতক শিশুকে নিয়ে আসা হতো তিনি তার জন্য দোয়া করতেন। (সহীহ বুখারী)
সন্তান জন্মের পর সপ্তম দিনের দায়িত্ব
উত্তম নাম রাখাঃ সন্তান পুত্র বা কন্যা যাই হোক না কেন তাদের উত্তম ও সুন্দর অর্থবোধক নাম থাকা বাঞ্ছনীয়। এটি মা বাবার কাছে সন্তানের হক। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কেয়ামতের দিন তোমাদের ডাকা হবে তোমাদের স্ব-স্ব নাম ও বাবার নাম সহ। অতএব তোমরা ভালো নাম রাখবে। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)মাথার চুল কাটাঃ সপ্তম দিনে শিশুর মাথার চুল কামিয়ে (মুন্ডন) দেওয়া শিশুর অধিকার। (সহীহ বুখারী সহীহ মুসলিম) আলী ইবনে আবু তালিব রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছাগল দিয়ে হাসানের আকিকা করেন এবং বলেন হে ফাতিমা তার মাথা কামাও এবং তার চুলের ওজনের সমপরিমাণ রুপা দান করো তদানুযায়ী আমি তার চুল ওজন করলাম এবং তার ওজন এক দিরহাম বা তার কাছাকাছি হল।চুল কেটে দেওয়ার ফলে শিশুর দর্শন, শ্রবণ,ঘ্যান এবং চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
আকিকা করাঃ নবজাতক সন্তান ছেলে হলে দুটি ছাগল অথবা ভেড়া আর কন্যা হলে একটি ছাগল অথবা ভেড়া তার নামানুসারে জবাই করা উত্তম। আকিকা করতে হয় সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে, সেদিন সম্ভব না হলে ১৪ তম দিনে এবং সেটিও সম্ভব না হলে ২১ তম দিনে আকিকা দিতে হবে।প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পুত্র সন্তানের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দাও”।
ছেলে সন্তানের খৎনা করানোঃ ছেলে সন্তানকে মুসলমানি করানোর সুন্নাহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হোসাইন উভয়ের আকিকা ও খৎনা সপ্তম দিনে করিয়েছিলেন। অবশ্য এই কাজটি ভালো ডাক্তার দিয়ে হসপিটাল বা ক্লিনিকে নিয়ে করাতে হব। উন্নত দেশে ছেলেদের মুসলমানি জন্মের কিছুদিনের মধ্যে হসপিটালে ডাক্তাররা করিয়ে দেন। উন্নত দেশের অমুসলিমরাও মুসলমানি করায় স্বাস্থ্যগত উপকারিতার জন্য।
লেখকের শেষ মন্তব্য
আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সন্তান জন্মের পূর্বে ও পরে মা-বাবার করণীয় সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য কিছুটা হলেও জানাতে পেরেছেন। প্রতিটি সন্তানই মুসলিম জন্মগ্রহণ করে। তার পিতামাতাই তাকে ইহুদি, খ্রিস্টান বা মাজুসি করে তোলে। প্রতিটি সন্তানই পিতামাতার উপর তিনটি ঋণের অধিকারী: তার মায়ের গর্ভে ধারণ করার সময়, তার স্তন্যপান করার সময় এবং তার বড় হওয়ার সময়।
এতক্ষণ আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি এই ধরনের তথ্য আরো জানতে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url