ই-কমার্স ও এফ-কমার্স কি? ই-কমার্স ও এফ-কমার্স কেন বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
আপনি যদি জানতে চান, ই-কমার্স ও এফ-কমার্স কি? ই-কমার্স ও এফ-কমার্স কেন বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান,তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
বর্তমান সময়ে এই উন্নত বিশ্বে প্রযুক্তি আমাদের জীবনে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই জড়িয়ে আছে। আজকের এই উন্নত বিশ্বে কেনাকাটাও এর ব্যতিক্রম হতে পারে না কারণ আজকের এই সময়ে মানুষ তার ব্যবসাকে একটি ব্যতিক্রমরূপ দিয়েছেন। এখন প্রতিটা ব্যবসায় ক্ষেত্র অনলাইন ব্যবসা রূপান্তরিত হতে শুরু হয়ে গেছে, অনলাইন ব্যবসা শুরু হয় ই-কমার্স এর মাধ্যমে এবং এফ কমার্স হলো ই-কমার্স এর একটি বিশেষ অংশ মাত্র। ই-কমার্স এবং এফ কমার্স এর উত্থান আমাদের দৈনিন্দ্য জীবনে পণ্য ও পরিসেবা কেনার এবং বিক্রয়ের ধরনকে পরিবর্তন করেছে।
ই-কমার্স কি?
ই-কমার্স, যাকে ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-বাণিজ্যও বলা হয়ে থাকে। ই-কমার্স হলো ঘরে বসে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটা করা। আপনি যখন কোন ই-কমার্স ওয়েবসাইটে যান, তখন আপনি পণ্যের ছবি, বিবরণ এবং দাম দেখতে পাবেন। আপনি যদি কোন পণ্য পছন্দ করেন, তাহলে আপনি অনলাইনেই অর্থ প্রদান করতে পারবেন এবং এরপর পণ্যটি আপনার বাড়িতে এসে পৌঁছাবে।
ই-কমার্স ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও পরিচালিত হতে পারে। ই-কমার্স শুরু হয় ১৯৮২ সালে দ্যা বোস্টন কম্পিউটার এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে যাকে অনলাইন ব্যবসা বা ই-কমার্স এর সূচনা ভাবা হয়ে থাকে। এরপর থেকেই ক্রমাগত এর জনপ্রিয়তা লাভ করতে করতে আজকের এই সময়ে ই–কমার্স ব্যবসা পরিণত হয়েছে একটি মাল্টি বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রিতে।
ই-কমার্সের সুবিধা: ক্রেতা ও বিক্রেতার জন্য
ই-কমার্স, বা ইলেকট্রনিক বাণিজ্য, আমাদের কেনাকাটা ও ব্যবসা করার ধরণে বিপ্লব এনেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও পরিষেবা কেনা-বেচার এই পদ্ধতিটি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই অনেক সুবিধা প্রদান করে।
ক্রেতাদের জন্য সুবিধা
- সুবিধা: ২৪/৭ যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে কেনাকাটা করা যায়।
- বিশাল পণ্য: বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ পণ্যের মধ্যে তুলনা ও নির্বাচন করার সুযোগ।
- ভালো দাম: প্রতিযোগিতা বেশি থাকায় কম দামে পণ্য পাওয়ার সম্ভাবনা।
- মূল্য তুলনা: বিভিন্ন দোকানের দাম সহজেই তুলনা করা যায়।
- পণ্য পর্যালোচনা: অন্যান্য ক্রেতাদের পণ্য পর্যালোচনার পড়ে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
- সহজ ফেরত: অনেক ই-কমার্স ওয়েবসাইটে সহজ ফেরত নীতি থাকে।
- ঘরে বসে ডেলিভারি: পণ্য ঘরে বসেই ডেলিভারি নেওয়া যায়।
- ভালো ডিল ও ছাড়: অনলাইনে প্রায়শই ভালো ডিল ও ছাড় পাওয়া যায়।
বিক্রেতাদের জন্য সুবিধা
- কম খরচ: সাধারণ দোকানের তুলনায় খরচ অনেক কম হয়ে থাকে।
- বিশ্বব্যাপী বাজার: পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় পণ্য বিক্রি করার সুযোগ থাকে।
- ২৪/৭ খোলা: দোকান ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে ৭ দিন খোলা থাকে।
- গ্রাহক ডেটা: গ্রাহকদের সম্পর্কে মূল্যবান ডেটা সংগ্রহ করা যায়।
- সহজে ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট: অনলাইন সরঞ্জাম ব্যবহার করে সহজেই ইনভেন্টরি ম্যানেজ করা যায়।
- গ্রাহকদের সাথে সহজ যোগাযোগ: গ্রাহকদের সাথে সহজেই যোগাযোগ করা যায় এবং তাদের প্রতিক্রিয়া জানা যায়।
- বেশি বিক্রি: অনলাইনে বেশি বিক্রি করার সম্ভাবনা থাকে।
- কম খরচে বিজ্ঞাপন: অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়ার খরচ কম।
বাংলাদেশেও ই-কমার্স ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রসার এবং মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়নের ফলে ই-কমার্সের বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দারাজ, ও-বাজার, রকমারি ইত্যাদি বাংলাদেশের জনপ্রিয় কিছু ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম।
এফ-কমার্স কি?
বর্তমান সময়ে অনলাইন ব্যবসা ই-কমার্সের হাত ধরে যাত্রা শুরু হলেও এই অগ্রযাত্রায় নতুনভাবে যুক্ত হয় এফ-কমার্স। এফ-কমার্স, যার পূর্ণরূপ ফেসবুক কমার্স, এফ-কমার্স হলো ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করার প্রক্রিয়াকে বলে। এটিতে পণ্য বা সেবা বিক্রি, বিজ্ঞাপন প্রচার, গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ এবং অনলাইন লেনদেন অন্তর্ভুক্ত।
এফ-কমার্স ব্যক্তিগত প্রোফাইল, গ্রুপ এবং পেজের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে। এছাড়াও বর্তমানে এফ-কমার্স বিজনেসকে আরও সহজে পরিচালনার জন্য ল্যান্ডিং পেইজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এটি মুলত ই-কমার্সের একটি বিশেষ ধরন মাত্র।
এফ-কমার্সের কিছু সুবিধা
এফ-কমার্স দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর কারণ হলো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং স্মার্টফোনের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি।
- সহজে শুরু করা যায়: ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকলেই যে কেউ এফ-কমার্স শুরু করতে পারে।
- কম খরচ: এফ-কমার্স শুরু করতে ঐতিহ্যবাহী ব্যবসার তুলনায় অনেক কম খরচ হয়।
- বিশাল বাজার: ফেসবুকে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী রয়েছে, যা আপনার পণ্য বা সেবার জন্য বিশাল বাজার তৈরি করে দেয়।
- বিজ্ঞাপন: ফেসবুকের বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আপনি আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে সঠিক লোকেদের কাছে পৌঁছাতে পারেন।
- গ্রাহকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ: ফেসবুক মেসেঞ্জার এবং মন্তব্যের মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এফ-কমার্সও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন ফেসবুকে পণ্য কেনাকাটা করছে। এফ-কমার্স বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে।
ই-কমার্স ও এফ-কমার্স কেন বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
বিভিন্ন কারণে ই-কমার্স ও এফ কমার্স বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, স্মার্টফোন প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়নের সাথে সাথে অনলাইন কেনাকাটা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর ফলে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
- ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট ব্যবহারকারী: বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে, ১০ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এর ফলে, অনলাইনে কেনাকাটার প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ই-কমার্স ও এফ-কমার্সের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
- সুবিধাজনক কেনাকাটা: ই-কমার্স ও এফ-কমার্স ক্রেতাদের ঘরে বসে কেনাকাটা করার সুযোগ করে দেয় এবং তুলনামূলকভাবে কম দামে পণ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন পণ্যের দাম ও বৈশিষ্ট্য সহজেই তুলনা করা যায়।
- বাজারের বিস্তার: ই-কমার্স ও এফ-কমার্স ব্যবসায়ীদের সারা দেশে তাদের পণ্য বিক্রি করার সুযোগ করে দেয়। এজন্য গ্রামীণ এলাকার মানুষ এখন অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারে, যা আগে সম্ভব ছিল না।
- নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ: ই-কমার্স ও এফ-কমার্স শিল্পে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।লজিস্টিক, ডেলিভারি, পেমেন্ট গেটওয়ে, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুন নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
- উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ: ই-কমার্স ও এফ-কমার্স ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে। কম খরচে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী বাজারে পণ্য বিক্রির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
- অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি: ই-কমার্স ও এফ-কমার্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।এটি জাতীয় আয় বৃদ্ধি করছে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করছে।
- সরকারের জন্য সুবিধা: ই-কমার্স ও এফ-কমার্স VAT ও অন্যান্য কর আদায়ে সহায়তা করছে। অর্থনীতির স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করছে।দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
- 24/7 প্রাপ্যতা: ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি সার্বক্ষণিক খোলা থাকে। এর মানে হল গ্রাহকরা যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে পণ্য ও পরিষেবা কিনতে পারেন। যারা দৈনন্দিন কাজকর্ম, চাকুরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তাদের জন্য এই প্লাটফর্মগুলো খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
- কোভিড-১৯ মহামারী: মহামারীর সময়, অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করতে বাধ্য হয়েছিল, যা ই-কমার্স ও এফ-কমার্সের ব্যবহার বৃদ্ধি করেছে।
- মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়ন: মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়ন ই-কমার্স ও এফ-কমার্স লেনদেনকে আরও সহজ করে তুলেছে।
ই-কমার্স ও এফ-কমার্স বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে সাথে অনলাইন কেনাকাটার প্রবণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর ফলে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতে এর গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
ই-কমার্স ও এফ-কমার্সের ভবিষ্যতের সম্ভাবনা: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে
ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, স্মার্টফোন প্রবেশাধিকার এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের ব্যবহার এই খাতগুলির দ্রুত বৃদ্ধিকে চালিত করছে।
- সোশ্যাল কমার্সের উত্থান: সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে পণ্য বিক্রি এবং কেনাকাটার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যবসাগুলি গ্রাহকদের সাথে সংযোগ স্থাপন এবং তাদের পণ্য প্রচার করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাবে।
- মোবাইল কমার্সে প্রবৃদ্ধি: বেশিরভাগ কেনাকাটা এখন মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে করা হয়। এই প্রবণতা ভবিষ্যতেও বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে মোবাইল-অপ্টিমাইজড ই-কমার্স ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশনের চাহিদা বাড়বে।
- ডেলিভারি অ্যাপের ব্যবহার বৃদ্ধি: ডেলিভারি অ্যাপগুলি গ্রাহকদের দ্রুত এবং সুবিধাজনকভাবে পণ্য সরবরাহ করে। এই পরিষেবাগুলির ব্যবহার ভবিষ্যতেও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
- ব্যক্তিগতকৃত অভিজ্ঞতা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML) ব্যবহার করে, ব্যবসাগুলি গ্রাহকদের জন্য আরও ব্যক্তিগতকৃত ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স অভিজ্ঞতা তৈরি করতে সক্ষম হবে।
- ভার্চুয়াল এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (VR/AR): VR এবং AR প্রযুক্তি গ্রাহকদের পণ্যগুলি আরও বাস্তবসম্মত উপায়ে দেখতে এবং অনুভব করতে দেবে, যা তাদের অনলাইনে কেনাকাটা করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে।
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স নতুন ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে, বিদ্যমান ব্যবসার জন্য বৃদ্ধির সুযোগ প্রদান করে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইক্যুবিটির তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজারের মূল্য ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা বর্তমান বাজারের আকারের তুলনায় চারগুণ বেশি। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে ই-কমার্স বাংলাদেশের জিডিপিতে ১.২% অবদান রাখতে পারে।
- দক্ষতা বৃদ্ধি: ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স ব্যবসাগুলির জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং, লজিস্টিকস এবং গ্রাহক পরিষেবায় দক্ষ কর্মীদের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এই দক্ষতাগুলির প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য আরও বেশি প্রস্তুত হচ্ছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের তথ্য অনুসারে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) খাতে কর্মসংস্থানের সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে ১ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে।
- গ্রাহকদের জন্য সুবিধা: ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স গ্রাহকদের জন্য পণ্য এবং পরিষেবার বিস্তৃত পছন্দ, প্রতিযোগিতামূলক দাম এবং আরও সুবিধাজনক কেনাকাটার অভিজ্ঞতা প্রদান করে। একটি গবেষণা অনুসারে, ৮০% এরও বেশি অনলাইন ক্রেতা বলেছেন যে তারা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলিতে আরও ভাল দামে পেয়ে থাকে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স
বাংলাদেশে, ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষাত যার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতাগুলি বাংলাদেশের ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স ব্যবসাগুলির জন্য উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করে। ছোট এবং মাঝারি আকারের উদ্যোক্তারা (SMEs) অনলাইনে তাদের পণ্য বিক্রি করে বাজারে প্রবেশ করতে পারে। গ্রামীণ এলাকার মানুষ ইন্টারনেট এবং মোবাইল ডিভাইস অ্যাক্সেসের মাধ্যমে অনলাইনে কেনাকাটা করতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ সরকার ই-কমার্স এবং এফ-কমার্সের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। ২০১৮ সালে, সরকার “ডিজিটাল বাংলাদেশ অ্যাকশন প্ল্যান 2021” চালু করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি ডিজিটাল অর্থনীতিতে পরিণত করা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে, সরকার ই-কমার্স অবকাঠামো উন্নত করতে এবং অনলাইনে কেনাকাটা করতে জনগণকে উৎসাহিত করতে কাজ করছে।
ডিজিটাল ওয়ালেট এবং মোবাইল পেমেন্টের মতো নিরাপদ এবং সুবিধাজনক ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯ সালে, বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল পেমেন্ট লেনদেনের সংখ্যা 70.3 ট্রিলিয়নে পৌঁছেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা 135.6 ট্রিলিয়নে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনলাইনে কেনাকাটা করা আরও সহজ হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে ই-কমার্স বাংলাদেশের জিডিপিতে ১.২% অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এর একটি গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে ২০২৫ সালের মধ্যে ই-কমার্স খাতে ১ মিলিয়নেরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
লেখক এর শেষ মন্তব্য
আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটিতে,ই-কমার্স ও এফ-কমার্স কি? ই-কমার্স ও এফ-কমার্স কেন বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেই সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য কিছুটা হলেও জানাতে পেরেছেন।ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, স্মার্টফোন প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়নের সাথে সাথে বাংলাদেশে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স দ্রুত বর্ধনশীল খাত হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এই প্রবণতাগুলি দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
এতক্ষণ আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি এই ধরনের তথ্য আরো জানতে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url