প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় (১০টি খাবারের তালিকা)

আপনি যদি জানতে চান, প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় (১০টি খাবারের তালিকা) সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান,তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় (১০টি খাবারের তালিকা)
বিভিন্ন কারণে একজন প্রসূতি মায়ের বুকের দুধের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। এজন্য একজন নতুন মায়ের বেশ কিছু পুষ্টিকর খাবার এবং কিছু  ন্যাচারাল হার্বাল মেডিসিন খাদ্য তালিকায় রাখা একান্তই জরুরি। কেননা একজন শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বা জন্মগ্রহণ করার পর তার প্রধান খাবার হচ্ছে তার মায়ের বুকের দুধ এবং  মায়ের বুকের দুধেই বাচ্চার প্রয়োজনীয় সকল উপাদান বিদ্যমান থাকে।

নবজাতক শিশুর জন্মের পর অনেক পিতা-মাতায় বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় খুঁজতে থাকেন। কারণ কারো কারো ক্ষেত্রে বুকে যতটুকু দুধ উৎপন্ন হয় তা নবজাতক শিশু খাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে না। বাংলাদেশে এমন হাজারো অনেক পরিবার আছেন যারা নবজাতক শিশুর জন্মের পর এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।

যেহেতু দুধই একজন নবজাতক শিশু্র একমাত্র খাবার এবং পুষ্টি গ্রহণের উৎস হয়ে থাকে। তাই নতুন মা তার সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক বেশি চিন্তিত হয়ে থাকেন।যদি আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে একজন  প্রসূতি মায়ের  বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় নিয়ে চিন্তিত হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

নবজাতক শিশুকে দুধ খাওয়ানোর নিয়ম

যদি আপনার নবজাতক শিশু দুধের স্তন বিন্দুটি মুখে ধরে রাখতে না পারে বা সেটি ভুল অবস্থানে থাকে, তবে নবজাতক শিশুকে দুধ পান করানো কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য সঠিক পদ্ধতিতে আপনার নবজাতক শিশুকে দুধ খাওয়ানোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় দেখা যায় প্রতিটি মায়ের শারীরিক কিছু অবনতির কারনেও  তার নবজাতক শিশুকে দুধ পান করানো এবং বাচ্চাকে সঠিকভাবে খাওয়ানো কষ্টকর হয়ে পড়ে ।

আবার বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ উৎপন্ন হওয়ার জন্য নবজাতক মায়ের স্তন সম্পূর্ণ খালি হওয়া খুবই জরুরী বিষয় হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যদি নবজাতক শিশুর সম্পূর্ণ খেয়ে খালি করতে না পারে, সেক্ষেত্রে নবজাতক মায়ের দুধ বের করে নেওয়া উচিত এবং সেই দুধ পরবর্তীতে নবজাতক শিশুকে খাওয়ানো উচিত হবে। আসুন জেনে নেই নবজাতক শিশুকে কিভাবে দুধ পান করাবেন।

দুধ খাওয়ানোর প্রস্তুতি
  • প্রসবের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান: প্রসবের প্রথম ঘন্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুকে মায়ের স্তনের সাথে পরিচিত হতে এবং প্রথম দুধ (কলোস্ট্রাম) পেতে সাহায্য করে, যা অ্যান্টিবডি এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদানে সমৃদ্ধ।
  • আরামদায়ক অবস্থানে থাকুন: শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আপনার এবং শিশুর উভয়ের জন্যই আরামদায়ক অবস্থান খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন অবস্থান চেষ্টা করে দেখুন যেমন "ক্রেডল","সাইড-লাইং"।
  • শিশুর সঠিক লাচিং নিশ্চিত করুন: শিশুর ঠোঁট আপনার এরিয়োলা (স্তনের কালো অংশ) এবং ব্রেস্টের কিছু অংশ ধরে রাখতে উৎসাহিত করুন। নিশ্চিত করুন যে শিশুর মাথা, ঘাড় এবং পিঠ সোজা আছে।
দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি
  • শিশুকে আপনার স্তনের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন: শিশুর মুখ আপনার স্তনের দিকে মুখ করা উচিত এবং তার ঠোঁট আপনার এরিয়োলা স্পর্শ করা উচিত।
  • শিশুকে দুধ খেতে উৎসাহিত করুন: শিশু যখন দুধ খাবে তখন তার গালে নড়াচড়া দেখা যাবে। যদি শিশু দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়, তবে তার ঠোঁট থেকে স্তন সরিয়ে নিন এবং তারপর আবার চেষ্টা করুন।
  • প্রতিটি স্তন থেকে সমান সময় দুধ খাওয়ান: প্রতিটি স্তন থেকে ১০-১৫ মিনিট দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
  • দুধ খাওয়ানো শেষ করার পর: শিশুর ঢেকুর তোলার জন্য তাকে আপনার কাঁধে ভরিয়ে রাখুন।
শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধই দিন এবং অন্য যে কোনো ধরনের বিকল্প  খাবার এড়িয়ে চলুন। ঘন ঘন খাওয়ান, যাতে করে স্তন খালি করে ফেলা যায়, ১ থেকে ২ ঘণ্টা অন্তর আপনার সন্তানকে দুধ  খাওয়ান। দুধ খাওয়ানোর বোতল বা ফিডার এড়িয়ে চলুন এবং প্রাকৃতিকভাবে তার মুখে স্তন প্রবেশ করিয়ে খাওয়ান।
প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় (১০টি খাবারের তালিকা)

প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় (১০টি খাবারের তালিকা)

নবজাতক শিশুর জন্য বুকের দুধ সর্বোত্তম খাদ্য। এটি শিশুর সুস্থ বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান, অ্যান্টিবডি এবং রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান সরবরাহ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সুপারিশ করে যে শিশুরা ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ পান করবে এবং দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের সাথে পরিপূরক খাবার খাবে।

বৈজ্ঞানিক কোন গবেষণায় প্রমাণিত না হলেও নিচে বর্ণিত খাবারগুলো প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য বহু প্রজন্ম ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। আপনি যদি একজন নবজাতকের মা হয়ে থাকেন, তাহলে এই খাবারগুলো অবশ্যই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত হবে।

১. কালো জিরাঃ মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে কালোজিরা  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পাশাপাশি কালোজিরা খাবার হজমের সহায়তা করে থাকে এবং  কুষ্ঠকাঠিন্য  ও পেট ফাঁপা রোগ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। কালোজিরা ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার।

২. মেথির বীজঃ মেথির বীজ সারা বিশ্বে মায়ের বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। মেথির বীজ  মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য একটি কার্যকরী উপাদান হয়ে থাকে। মেথির  বীজ মূলত  রান্নার স্বাদ বাড়ানোর জন্য  গৃহিণীরা ব্যবহার করে থাকেন। মেথির বীজে থাকা  ওমেগা 3  ফ্যাট যা আপনার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩. সবুজ শাকসবজিঃ পালং শাক, লাউ শাক, মেথি শাক, শসা, ঢেঁড়স, ব্রকলির মতো বিভিন্ন সবুজ শাকসবজি দেহে লৌহ, ক্যালসিয়াম এবং ফোলেটের মত খনিজ তৈরি করে থাকেন। এ ধরনের শাকে প্রচুর ভিটামিন থাকে এবং মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তত এক প্রকার সবুজ শাকসবজি থাকা উচিত হবে।

৪. খেজুরঃ খেজুর খনিজ, ভিটামিন এবং ফাইবারের একটি সমৃদ্ধ খাদ্য উৎস  হয়ে থাকেন। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি6 রয়েছে। এই পুষ্টি উপাদানগুলি মাতৃ স্বাস্থ্যের জন্য এবং বুকের দুধের উৎপাদনে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • খেজুরে থাকা ভিটামিন বি6 দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • পটাশিয়াম তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা দুধের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক।
  • ম্যাগনেসিয়াম হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা দুধের উৎপাদনে প্রভাব ফেলে।
  • খেজুরে থাকা ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, যার ফলে মায়ের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দুধের উৎপাদনে স্থিতিশীলতা আসে।
  • খেজুর শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে, যা দুধের উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য।
  • খেজুরে থাকা প্রোল্যাক্টিন উপাদান হরমোনের নিঃসরণকে উদ্দীপিত করতে পারে। প্রোল্যাক্টিন হল বুকের দুধ উৎপাদনের জন্য দায়ী হরমোন হয়ে থাকে।
৫. গাজরঃ গাজর, বেটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি খাদ্য উৎস  যা মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • ভিটামিন এ: গাজর ভিটামিন এ-এর একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা স্তন্যগ্রন্থির কোষের বৃদ্ধি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন এ থাকলে স্তন্যগ্রন্থি আরও বেশি দুধ উৎপাদন করতে পারে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: গাজরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ফ্রি র‌্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র‌্যাডিকেল স্তন্যগ্রন্থির কোষের ক্ষতি করতে পারে এবং দুধ উৎপাদন হ্রাস করতে পারে।
  • খনিজ: গাজরে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজও থাকে। এই খনিজগুলি স্তন্যগ্রন্থির সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • হরমোন: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে গাজর প্রোল্যাক্টিন হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, যা দুধ উৎপাদনের জন্য দায়ী হয়ে থাকে।
অনেক সংস্কৃতিতে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে, প্রসূতি মায়েদের দুধের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য গাজর খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

৬. কাজুবাদামঃ কাজুবাদাম প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ই এবং ফাইবার এর একটি সমৃদ্ধ খাদ্য উৎস। এই পুষ্টি উপাদানগুলি নতুন টিস্যু গঠন, হরমোন নিয়ন্ত্রণ, টিস্যু মেরামত, কোষের শক্তি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি এবং হজম উন্নত করতে সহায়তা করে।
  • স্বাস্থ্যকর চর্বি: কাজুবাদামে প্রচুর পরিমাণে অসম্পৃক্ত চর্বি থাকে যা প্রোল্যাক্টিন হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। প্রোল্যাক্টিন হল বুকের দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য প্রধান নিয়ন্ত্রক হরমোন।
  • প্রোটিন: পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ শরীরের নতুন টিস্যু তৈরিতে এবং মেরামতে সহায়তা করে, যা স্তন্যপানের জন্য অপরিহার্য।
  • খনিজ: কাজুবাদাম ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম এর মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজের একটি ভাল উৎস। এই খনিজগুলি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং স্তন্যগ্রন্থির টিস্যু মেরামত করতে সহায়তা করে।
  • ভিটামিন: কাজুবাদাম ভিটামিন বি, ই এবং কে এর একটি ভাল উৎস। এই ভিটামিনগুলি শরীরে শক্তি সরবরাহ করে, কোষের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
৭. ওটমিল: ওটমিল একটি জনপ্রিয় পুষ্টিকর খাবার, দীর্ঘদিন ধরে স্তন্যদানকারী মায়েদের মধ্যে বুকের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
  • বিটা-গ্লুকান সমৃদ্ধ: ওটমিল বিটা-গ্লুকান নামক একটি বিশেষ ধরণের ফাইবারের ভালো উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিটা-গ্লুকান ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা দুধের উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • ল্যাক্টোজেনিক বৈশিষ্ট্য: ওটমিলে ল্যাক্টোজেনিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়, যার অর্থ এতে এমন উপাদান আছে যা দুধের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
  • শক্তির উৎস: জটিল কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ হওয়ায় ওটমিল দীর্ঘস্থায়ী শক্তি প্রদান করে। স্তন্যদানকারী মায়েদের প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয়, তাই ওটমিল তাদের দিন শুরু করার জন্য একটি চমৎকার খাবার হতে পারে।
  • পুষ্টিগুণ: ওটমিল ভিটামিন এবং খনিজ যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভালো উৎস। এই পুষ্টি উপাদানগুলি মায়েদের সুস্থ থাকতে এবং তাদের শিশুদের সঠিকভাবে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে।
৮. অ্যাভোকাডোঃ অ্যাভোকাডো মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি, ফোলেট, ভিটামিন ই এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য উৎস।অ্যাভোকাডোর পুষ্টি উপাদানগুলি বুকের দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
  • স্বাস্থ্যকর চর্বি: অ্যাভোকাডো মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি সমৃদ্ধ, যা দুধের চর্বির গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই চর্বিগুলি শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের বিকাশেও সাহায্য করে।
  • ফোলেট: অ্যাভোকাডো ফোলেট এর একটি ভালো উৎস, যা একটি বি ভিটামিন যা লাল রক্ত ​​কোষের উৎপাদনে সাহায্য করে এবং নতুন কোষের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। পর্যাপ্ত ফোলেট গ্রহণ করা দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে।
  • ভিটামিন ই: অ্যাভোকাডো ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন ই গ্রহণ করা স্তন্যপানের সময়কাল বাড়াতে এবং দুধের গুণমান উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে।
  • ফাইবার: অ্যাভোকাডো ফাইবার সমৃদ্ধ, যা হজমশক্তি উন্নত করতে এবং মায়েদের দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ণ রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে, যা দুধের উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারে।
৯. শতমূল বা এসপারাগাসঃ শতমূল (Asparagus officinalis) একটি জনপ্রিয় সবজি যা দীর্ঘদিন ধরে ঔষধি গুণাবলীর জন্য এবং বুকের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
  • ফাইটোইস্ট্রোজেন: শতমূল বিভিন্ন ফাইটোইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ যা ইস্ট্রোজেন হরমোনের অনুরূপ প্রভাব ফেলে। এস্ট্রোজেন স্তন্যগ্রন্থির দুধ উৎপাদনকারী কোষের বৃদ্ধি ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শতমূলের ফাইটোইস্ট্রোজেনগুলি স্তন্যগ্রন্থিতে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে দুধের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
  • ল্যাক্টোজেন উদ্দীপনা: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে শতমূল প্রোল্যাক্টিন নামক হরমোনের নিঃসরণকে উদ্দীপিত করতে পারে, যা স্তন্যপানের জন্য দায়ী। প্রোল্যাক্টিন স্তন্যগ্রন্থিতে দুধ উৎপাদনকারী কোষগুলিকে উদ্দীপিত করে এবং দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
  • পুষ্টি উপাদান: শতমূল ভিটামিন এ, সি, বি6, ফোলেট এবং পটাশিয়াম সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এই পুষ্টি উপাদানগুলি স্তন্যদানকারী মায়েদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ বুকের দুধের উৎপাদন বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
  • প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে: স্তন্যপানের সময় স্তনে ব্যথা ও অস্বস্তি একটি সাধারণ সমস্যা। শতমূলের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি এই ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা স্তন্যদানের সময়কাল বাড়াতে এবং দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
১০. কবুতরের মাংসঃ প্রসূতি মায়ের বুকের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পর্যাপ্ত সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ একটি অপরিহার্য অংশ। এক্ষেত্রে কবুতরের মাংস  মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য একটি কার্যকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
  • প্রোটিন: দুধের উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে থাকে।
  • আয়রন: রক্ত ​​উৎপাদনে সহায়তা করে, যা মায়ের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • অন্যান্য খনিজ: ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম,ভিটামিন বি12 এবং জিঙ্কও থাকে যা মায়ের শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য কার্যকারিতায় ভূমিকা রাখে।
ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাসে, কবুতরের মাংস প্রায়শই প্রসূতি মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য একটি কার্যকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয় থাকে।

লেখকের শেষ মন্তব্য

আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটিতে, প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় (১০টি খাবারের তালিকা)  সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য কিছুটা হলেও জানাতে পেরেছেন। শুধু খাদ্যতালিকার পরিবর্তনই নয়, বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা করে শারীরিক হালকা ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়ে থাকেন যা একজন প্রসূতি মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখে। 

এতক্ষণ আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি এই ধরনের তথ্য আরো জানতে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url