কিডনি ভালো রাখে এমন ১০টি খাবার সম্পর্কে জানুন
কিডনি আমাদের শরীরের অপরিহার্য অঙ্গ যা রক্ত পরিশোধন, তরল ভারসাম্য বজায় রাখা এবং হরমোন নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সম্পাদন করে। সুস্থ জীবনযাপন এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য কিডনির সুস্থতা অপরিহার্য অংশ।
আর যদি আপনি জানতে চাচ্ছেন যে,কিডনি ভালো রাখে এমন ১০টি খাবার সম্পর্কে তাহলে আজকে এই পোস্টটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
মানবদেহে কিডনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কেমিকেলযুক্ত ভেজাল খাবার এবং পরিবেশ দূষণের কারণে কিডনি রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। কিডনিকে সুস্থ রাখতে খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
মানব দেহে কিডনির গুরুত্ব
কিডনি আমাদের শরীরের দুটি মটরশুঁটি আকৃতির অঙ্গ যা পেটের পিছনের দিকে অবস্থিত। এগুলো আমাদের রক্ত পরিশোধন, তরল ভারসাম্য বজায় রাখা, ইলেকট্রোলাইট নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হাড় শক্তিশালী রাখা এবং বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
- রক্ত পরিশোধন: কিডনি রক্ত থেকে অপशिষ্ট পদার্থ, তরল এবং ইলেকট্রোলাইট ফিল্টার করে।
- তরল ভারসাম্য বজায় রাখা: কিডনি শরীরে তরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- হরমোন নিয়ন্ত্রণ: কিডনি এরাথ্রোপয়টিন নামক একটি হরমোন উৎপন্ন করে যা লাল রক্ত কোষ তৈরিতে সহায়তা করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এমন হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে।
- খনিজ পদার্থ নিয়ন্ত্রণ: কিডনি ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- অ্যাসিড-ক্ষার ভারসাম্য বজায় রাখা: কিডনি রক্তের pH স্তর নিয়ন্ত্রণ করে।
বর্তমান পরিস্থিতি
বিশ্বব্যাপী, কিডনি রোগ একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, কিডনি রোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর 7ম প্রধান কারণ।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি
বাংলাদেশেও কিডনি রোগ একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, দেশে প্রায় 8.6 মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই কিডনি রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। উচ্চ রক্তচাপ, অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং অপর্যাপ্ত সচেতনতাও এই সমস্যায় অবদান রাখছে।
কিডনি রোগের কিছু ঝুঁকির কারণ
- ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস কিডনি রোগের প্রধান কারণ।
- উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
- পরিবারে কিডনি রোগ থাকা: যদি আপনার পরিবারে কিডনি রোগ থাকে তবে আপনার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- অতিরিক্ত ওজন: স্থূলতা বা মস্তিষ্কস্থূলতা কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- ধূমপান: ধূমপান কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
- অতিরিক্ত মদ্যপান: অতিরিক্ত মদ্যপান কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
কিডনি ভালো রাখে এমন ১০টি খাবার
মানবদেহে কিডনি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন, তরল ভারসাম্য বজায় রাখা এবং বিপাকীয় বর্জ্য নিষ্কাশন সহ বিভিন্ন জটিল কাজ সম্পাদন করে। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সুস্থ কিডনি অপরিহার্য।
১. আপেল: পেকটিন সমৃদ্ধ, যা LDL (ক্ষতিকারক) কোলেস্টেরল কমায় এবং কিডনির উপর চাপ কমায়। এতে পটাশিয়ামও কম থাকে।
২. স্ট্রবেরি ও ব্লুবেরি : অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা কিডনি কোষের ক্ষতি রোধ করে। এতে ফাইবার এবং ভিটামিন সিও রয়েছে।
৩. ব্রকলি: ভিটামিন সি, কে এবং ফাইবারের ভালো উৎস। এতে পটাশিয়ামও কম থাকে।
৪. ক্যাপসিকাম: ভিটামিন সি, এ এবং পটাশিয়ামের ভালো উৎস। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা কিডনি কোষের ক্ষতি রোধ করে।
৫. মাছ: ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস (স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকারেল)। রক্তচাপ এবং প্রদাহ কমায়।
৬. রসুন: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। রক্তচাপ কমায়।
৭. আঙ্গুর: পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, তবে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে যা কিডনির জন্য উপকারী।
৮. পালং শাক: ভিটামিন এ, কে এবং ফাইবারের ভালো উৎস। পটাশিয়াম কম।
৯. স্ট্রবেরি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা কিডনি কোষের ক্ষতি রোধ করে। ভিটামিন সি এবং ফাইবারও রয়েছে।
১০. বাদামি চাল: বাদামি চালে প্রচুর ভিটামিন, ফাইবার, খনিজ এবং পটাশিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়াম থাকে যা কিডনির জন্য ভালো।
কিডনিকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় উপরের খাবারগুলো অন্তর্ভুক্ত করুন। নিয়মিত এসব খাবার খেলে কিডনি ভালো থাকবে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমবে।
কিডনি ভালো রাখার জন্য কিছু সাধারণ নির্দেশিকা
- পানি: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি (প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস) পান করা কিডনির সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। এটি বিষাক্ত পদার্থ বের করে ফেলতে এবং কিডনির কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- প্রোটিন: উচ্চ-মানের প্রোটিন যেমন মাছ, মুরগির মাংস, ডাল এবং বাদাম সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- ফ্যাট: স্বাস্থ্যকর চর্বি, যেমন অলিভ অয়েল, বাদাম এবং বীজ গ্রহণ করা উচিত। স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলুন।
- কার্বোহাইড্রেট: জটিল কার্বোহাইড্রেট, যেমন গোটা শস্য, ফল এবং শাকসবজি, পছন্দ করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।
- খনিজ পদার্থ: পটাশিয়াম এবং ফসফরাসের পরিমাণ সীমিত করুন, বিশেষ করে যদি আপনার কিডনি রোগ থাকে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
এছাড়া আরও নির্দেশিকা
- লবণ, ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ সীমিত করুন (ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে)।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন।
- ধূমপান ত্যাগ করুন।
- মদ্যপান সীমিত করুন।
- নিয়মিত রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন।
সীমিত খাবার
- লাল মাংস: গরুর মাংস, শুকরের মাংস, খাসির মাংস,
- প্রক্রিয়াজাত খাবার: ফাস্ট ফুড, সসেজ, বেকন, শুকনো মাংস
- চিনিযুক্ত পানীয়: সোডা, জুস, শক্তি পানীয়
- ডেজার্ট: পেস্ট্রি, কেক, আইসক্রিম
- লবণাক্ত খাবার: চিপস, প্রেটজেল, মুখরোচক খাবার
লেখক এর শেষ কথা
আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটিতে, আপনার কিডনি ভালো রাখে এমন ১০টি খাবার, সেই সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য কিছুটা হলেও জানতে পেরেছেন। কিডনিকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় উপরের খাবারগুলো অন্তর্ভুক্ত করুন। নিয়মিত এসব খাবার খেলে কিডনি ভালো থাকবে এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমবে।
এতক্ষণ আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি এই ধরনের তথ্য আরো জানতে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url